মঙ্গলবারের পর থেকে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী বাস চলাচল অনেকাংশে কমে গেছে বলে সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সালেকুজ্জামান সালেক জানান।
Published : 09 Dec 2022, 07:25 PM
ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় উত্তরাঞ্চলের বাস ও ট্রেনে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে।
পরিবহন মালিক ও চালকরা বলছেন, হয়তো নিজেদের নিরাপত্তার কারণে মানুষজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঢাকামুখী হচ্ছেন না। যে কারণে কমে গেছে বাস চলাচল। পণ্যবাহী পরিবহনেও একই প্রভাব পড়েছে।
শুক্রবার বিকালে দেখা গেছে, ব্যস্ততম সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়ার পথে পরিবহনের সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা। এমনকি অভ্যন্তরীণ পথে চলাচলকারী ছোট যানবাহনও খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ হঠাৎ একটি বাস উত্তরবঙ্গের দিকে গেলে ঢাকামুখী পরিবহন প্রায় নেই বললেই চলে। উত্তরের পথেও গাড়িগুলোতে যাত্রী সংকট দেখা গেছে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি বদরুল কবির শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, “বিকাল থেকে ঢাকামুখী যানবাহন চলাচল অনেকটা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এ কারণে মহাসড়ক অনেকটা ফাঁকা অবস্থায় রয়েছে। তবে ঢাকা থেকে দু-একটা যানবাহন উত্তরের দিকে আসছে। বিএনপির গণসমাবেশের কারণে আতঙ্কে মানুষজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঢাকামুখী হচ্ছেন না।”
গত মঙ্গলবারের পর থেকে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী বাস চলাচল অনেকাংশে কমে গেছে বলে সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সালেকুজ্জামান সালেক জানান।
তিনি আরও বলেন, “রাতের বেলায় কিছুটা যানবাহন চললেও দিনের অধিংকাশ সময়ই ফাঁকা থাকছে মহাসড়ক। পণ্যবাহী পরিবহনেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে মহাসড়কে কোনো চেকপোস্ট বা নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়নি।”
সহিংসতার আতঙ্কের কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে আগের তুলনায় অন্তত ৩০ ভাগ বাস চলাচল কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আতিকুর রহমান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, “কয়েকদিন হলো যাত্রী সংকটের কারণে ঢাকামুখী বাস চলাচল কিছুটা কম ছিল। বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আতঙ্কের কারণে মানুষজন ঢাকামুখী না হওয়ায় এ অবস্থা দেখা দিয়েছে।”
বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে সাংগঠনিক বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় সবশেষ শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করার কথা রয়েছে দলটির।
এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার থেকেই আশপাশের সাভার, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী পরিবহনে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তাও চেক করা হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশি তল্লাশির কারণে, যাত্রী কমে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে পরিবহন চালকদেরও।
এই অবস্থার মধ্যে ঢাকা-সিরাজগঞ্জ রেলপথেও যাত্রী কমে গেছে বলে রেলওয়ে বিভাগ জানিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী মাসুদ রানা বলেন, “কয়েকদিন ধরে সিরাজগঞ্জ-ঢাকা পথে চলাচলকারী একমাত্র ট্রেনটিতে (সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস) টিকিট বিক্রি কমে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেকে অগ্রিম বুকিং দেওয়া টিকিট ফেরত দিয়ে যাত্রা বাতিল করছেন।“
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি রওশন ইয়াজদানি বলেন, “দিনের বেলা যানবাহনের চাপ কম গেছে। তবে রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন আগের মতই চলছে।”
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবন্ধু সেতুর এক কর্মকর্তা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই পরিবহন সংকটের কারণে সেতুর দুই পাড়ে টোল আদায় কমে গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে এটা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে সড়ক-নৌপথে ৮৪ চেকপোস্ট, ঢাকামুখী পরিবহন প্রায় বন্ধ
'ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যেতে বাসে পুলিশ ৮ থেকে ১০ বার চেক করছে'
সাভারের বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়েছে পুলিশের তল্লাশি চৌকি
সাভারে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশের তল্লাশি
গাজীপুরে দূরাপাল্লার বাস কম, চেকপোস্টে তল্লাশি ‘তথ্য পেলে’
গাজীপুরে পুলিশের তল্লাশি, চেক করা হচ্ছে ‘ফোনের মেসেজ’