বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনারে নারীর বিরোধিতায় ফের সরব কাদের সিদ্দিকী

গত এপ্রিলে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার জানাজার সময় রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতে আসা নারী ইউএনওকে বাধা দিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। 

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2023, 05:12 AM
Updated : 21 May 2023, 05:12 AM

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতির বিরোধিতায় আবার বক্তব্য দিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। 

তিনি বলেছেন, “একজন মুসলমান পুরুষের জানাজা নামাজের সময় কোনো ক্রমেই একজন মহিলার যাওয়ার শরিয়ত সম্মত কোনো অধিকার নাই।”

গত ২৯ এপ্রিল টাঙ্গাইলের সখীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে সখীপুর বাজার বণিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ খানের জানাজার সময় রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতে আসা নারী ইউএনওকে বাধা দেন কাদের সিদ্দিকী। 

পরে জানাজা শেষে কাদের সিদ্দিকী চলে যাওয়ার পর সখীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আলম গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদর্শন করেন।  

সে সময় ইউএনওকে বাধা দেওয়ার ব্যাখ্যায় কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, “একজন মহিলা দিয়ে এভাবে হাজার হাজার মুসল্লিদের সামনে একজন মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোটা বেমানান দেখায়, যা ইসলামী শরিয়ত পরিপন্থি।” 

অন্যদিকে ইউএনও ফারজানা আলম সে সময় বলেছিলেন, “আমি তো জানাজায় যাইনি। আমি গিয়েছি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতে। কোথাও লেখা নেই কোনো নারী সরকারি কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধার জানাজার গার্ড অব অনারে থাকতে পারবেন না।” 

শনিবার সন্ধ্যায় সখীপুর উপজেলা মিলনায়তনে আব্দুল হামিদ খানের দোয়া মাহফিল ও স্মরণ সভায় আবারও সেই প্রসঙ্গ তোলেন কাদের সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, “ইউএনও বলেন, আইনে কোনো বাধা নেই। এই আইন যখন লেখা হয় তখন আমিও ছিলাম সেই আইন তৈরির সময়। মুক্তিযোদ্ধাদের কীভাবে সালাম দেওয়া হবে, তার ফাইল তৈরিতে আমারও যথেষ্ট ভূমিকা আছে।” 

সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, “আমি একজন মুসলমান, আমি যতক্ষণ বেঁচে থাকব, আল্লাহ রসুলের হুকুমের বাইরে আমি এক পা ফেলব না। এতে দুনিয়ায় কী পেলাম কী পেলাম না এটা আমার কাছে বড় কথা নয়। এই সখীপুরের ইউএনও আমার মেয়ের চেয়ে বয়সে কম, আমি আমার মাকে যেমন সম্মান করি, ঠিক তেমনি প্রত্যেকটি মেয়েকে সম্মান করি। কাউকে ছোট করতে চাই না।
“কোনো মহিলার সালাম দিতে বাধা নাই, কিন্তু আইনে এটাও দেখাতে পারবেন না যে শরিয়ত মত কোনো মহিলা পুরুষের লাশকে সালাম দেওয়ার কথা আইনে কোথাও বলা আছে। যদি আইনে বাধা না থাকলে আপনি যেতে পারেন, আইনে সম্মতি থাকলেও আপনি যেতে পারেন না।”

সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা প্রশাসন। ডিসি বা ইউএনও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। 

অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন। সে কারণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০২১ সালে গার্ড অব অনার’ দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের বাদ রাখার সুপারিশ করে, যা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা ওঠে।

সংসদের অধিবেশনে বিরোধী দল, সরকারের শরিক ও খোদ সরকারি দলের সদস্যরাও এই সুপারিশের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংসদীয় কমিটির ওই সুপারিশ যাতে বাস্তবায়ন না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি ওঠে সংসদে।

ওই প্রেক্ষাপটে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের বাদ রাখার সুপারিশ থেকে সরে আসে সংসদীয় কমিটি।