বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে যেভাবে দিতে হবে রাষ্ট্রীয় সম্মান

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর কীভাবে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে, তা নতুন করে নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2020, 06:32 AM
Updated : 15 Nov 2020, 06:32 AM

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১১ নভেম্বর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন আদেশ, ২০২০’ শীর্ষক এই গেজেট জারি করেছে। এর মধ্যে দিয়ে ২০০৫ সালের নিয়ম বাতিল করা হয়েছে।

গেজেট অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রমাণকের যে কোনো একটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকতে হবে।

প্রমাণক:

মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেক্টর) এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী)।

লাল মুক্তিবার্তার মধ্যে রয়েছে- লাল মুক্তিবার্তা (চূড়ান্ত লাল বই), লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, বেসামরিক গেজেট, প্রবাসে বিশ্বজনমত গেজেট, ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকা, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) গেজেট, শব্দসৈনিক- স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলীদের তালিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের (বীরাঙ্গনা) তালিকা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের তালিকা, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে নিয়োজিত বা দায়িত্ব পালনকারী মুক্তিযোদ্ধা গেজেট, সরকারের মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের তালিকা এবং মুজিবনগর কর্মচারী তালিকা এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশক্রমে মন্ত্রণালয়ের জারি করা অন্যকোন নামীয় তালিকা সংক্রান্ত গেজেট।

বাহিনী গেজেটের মধ্যে রয়েছে- যুদ্ধাহত সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা, যুদ্ধাহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ), যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) গেজেট, সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের নামীয় তালিকা, বিমান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকা, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, নৌকমান্ডোদের তালিকা, বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমান বিজিবি) মুক্তিযোদ্ধাদের নামীয় তালিকা, পুলিশ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা।

যেভাবে জানাতে হবে সম্মান

গেজেটে বলা হয়েছে, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে হবে। ঢাকায় অবস্থানরত খেতাবপ্রাপ্ত বা যুদ্ধাহত কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা ইউএনওকে তা অবহিত করবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আত্মীয়-স্বজন বা কোনো নাগরিক প্রশাসনকে অবহিত করতে পারবেন। এমনকি সংবাদমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হলেও যাচাই করে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারবে।

মহানগর ও জেলা সদরে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে হলে সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন ইউএনও। রাষ্ট্রীয় বা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকলে জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও’র পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

গেজেটে বলা হয়েছে, সম্মান জানানোর সময় কফিন জাতীয় পতাকায় আবৃত করতে হবে। তবে সৎকার বা সমাধিস্থ করার আগে জাতীয় পতাকা খুলে ফেলতে হবে।

সরকারের অনুমোদিত প্রতিনিধি কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পুলিশ বাহিনীর অনুমোদিত সংখ্যক সশস্ত্র সদস্যকে দিয়ে সশস্ত্র সালাম জানাতে হবে এবং বিউগলে করুণ সুর বাজাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট থানার ওসি গার্ড অব অনার পরিচালনা করবেন। ওসি রাষ্ট্রীয় বা জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে থাকতে না পারলে থানার পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে বাহিনীর নিজস্ব রীতি অনুসরণ করতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী এবং ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাকে সৎকার বা সমাধিস্থ করতে হবে জানিয়ে গেজেটে বলা হয়েছে, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।