‘গার্ড অব অনার’ থেকে নারী বাদের সুপারিশ থেকে সরল সংসদীয় কমিটি

তীব্র সমালোচনার মুখে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের বাদ রাখার সুপারিশ থেকে সরে এসেছে সংসদীয় কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2021, 01:30 PM
Updated : 8 August 2021, 01:30 PM

রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই কার্যবিবরণীতে গত ১৩ জুনের ওই সুপারিশ রাখা হয়নি।

জুন মাসে কমিটির বৈঠকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার ক্ষেত্রে দিনের বেলায় আয়োজন করা এবং নারী ইউএনওর বিকল্প ব্যক্তি নির্ধারণের ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছিল। ওই সুপারিশের কথা সংসদ সচিবালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানানো হয়।

সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা প্রশাসন। ডিসি বা ইউএনও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন, আর সেখানেই আপত্তি তোলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

ওই ‍সুপারিশ করার ব্যাখ্যায় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেছিলেন, “মহিলা ইউএনও গার্ড অব অনার দিতে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। মহিলারা তো জানাজায় থাকতে পারেন না।”

কমিটির ওই সুপারিশের পর নানা মহলে সমালোচনা ওঠে। সংসদের অধিবেশনে বিরোধী দল, সরকারের শরিক ও খোদ সরকারি দলের সদস্যরাও এই সুপারিশের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংসদীয় কমিটির ওই সুপারিশ যাতে বাস্তবায়ন না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবিও ওঠে সংসদে।

রোববার বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটির একজন সদস্য ওই বিষয়ে আলোচনা তুলেছিল। আজ (রোববার) কার্যবিবরণী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওটা ‘টকড আউট’ করে দেওয়া হয়েছে।”

রোববারের সভার কার্যবিবরণীতে সিদ্ধান্ত তালিকায় ‘গার্ড অব অনারে’ নারী কর্মকর্তা বাদ দেওয়ার সুপারিশটি দেখা যায়নি।

এদিকে বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কল্যাণ ট্রাস্টের জমি-জমা সংক্রান্ত কাগজপত্র হালনাগাদের অগ্রগতি সম্পর্কিত তথ্যাদি আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, “আমরা মন্ত্রণালয়কে একটি কমিটি করতে বলেছি। তারা কল্যাণ ট্রাস্টের এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জমিজমার বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য আমাদের জানাবে। কল্যাণ ট্রাস্টের প্রচুর সম্পত্তি। অনেক সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। এই পুরোটার হিসাব আমরা করতে চাই। মন্ত্রণালয়ের ওই কমিটি সংসদীয় কমিটির প্রত্যেক বৈঠকে হালনাগাদ তথ্য জানাবে।” 

বৈঠকে সব সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি ২২টি বিশেষায়িত হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এছাড়া জেলা অথবা উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স অফিস নিচতলায় স্থাপন করার লক্ষ্যে বিদ্যমান দোকান স্থানান্তরের সুপারিশও করা হয়।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস তিনতলায়। আর নিচে দোকান। মুক্তিযোদ্ধাদের যে বয়স, তাতে তিন তলায় ওঠার সমস্যা। এজন্য আমরা বলেছি, সকল জেলা ও উপজেলায় অফিস কমপ্লেক্সে সংসদের (মুক্তিযোদ্ধা সংসদ) অফিস নিচতলায় আর দোকান উপরে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়।”

শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কাজী ফিরোজ রশীদ ও এ কে এম রহমাতুল্লাহ অংশ নেন।