অনেকে গ্যাস বিল দিচ্ছে, কিন্তু সেটা তিতাসের অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে না, বলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।
Published : 25 Apr 2024, 10:02 PM
গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ফলে গত দুই বছরে কোম্পানিটির সিস্টেম লস ২২ থেকে ৭ শতাংশে নেমেছে। তবে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে ‘ভূতুড়ে গ্রাহক’, যে কারণে গ্রাহক টাকা দিলেও সব তিতাসের হিসাবে জমা হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কার্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য তুলে ধরেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
তিনি বলেন, “চেষ্টা করলে কাজ হয়, সেটাই আমরা দেখলাম। আমাদের টার্গেট হচ্ছে সিস্টেম লস শূন্য শতাংশে নিয়ে আসা।”
গত দুই বছরে ৩৩৬টি শিল্প সংযোগ, ৪৭৫টি বাণিজ্যিক সংযোগ, ৯৭টি ক্যাপটিভ পাওয়ার সংযোগ, ১৩টি সিএনজি স্টেশনে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং ৯৮৯ কিলোমিটার লাইন উচ্ছেদ করার তথ্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিচ্ছিন্ন করা অবৈধ লাইনের গ্রাহক সংখ্যা ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭০ জন। জরিমানা করা হয়েছে ৬০৪ কোটি টাকা।
“অনেক বাধা আসছে। কেবল রাজনৈতিক ব্যক্তি না, বিভিন্ন ধরনের বাধা আসছে। কিন্তু কেউ আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে না।“
তবে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও তিতাসে ‘ভূতুড়ে’ গ্রাহক বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকে গ্যাস বিল দিচ্ছে, কিন্তু সেটা তিতাসের অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে না। এই ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই বিষয়গুলো একটা ভালো অবস্থায় দেখতে পাব বলে আশা করছি।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিতরণ সংস্থাগুলোকে তাদের সব আবাসিক বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহককে পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।
আরও বেশি স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিস্টেম লস, অপচয় বা চুরির পরিমাণ শূন্য নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
দেশে দৈনিক যে গ্যাস বিতরণ হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশই যায় তিতাসের গ্রাহকদের কাছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের মত শিল্পঘন জেলাগুলোর পাশাপাশি আরও কয়েকটি জেলা রয়েছে এই কোম্পানির অধীনে।
প্রতিমন্ত্রী তিতাসের কার্যক্রম পরিদর্শন করতে গিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম নিয়েই বেশি কথা বলেন।
“অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে লাইন নিয়ে মাসকে মাস ব্যবহার করছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন হচ্ছে, আরও অনেক বাকি আছে সেগুলো কাটা হচ্ছে।”
ক্যাপশন: বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে তিতাস গ্যাসের কার্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু
তিতাসের জন্য একটা থার্ড পার্টি ফাইন্যান্সিয়াল অডিটর কনসালটেন্ট নিয়োগ করার কথাও জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, “ওই অডিটের মাধ্যমে কোম্পানির বিলিং অ্যামাউন্ট, গ্রাহকের কাছ থেকে পাওয়া বিলের পরিমাণ মিলিয়ে দেখা হবে।
“তিতাস এখন গ্যাসের যে প্রাইসিং করছে, কস্টিং এস্টিমেশন করছে সেখানে কোনো ফাঁকফোকর আছে কি না সেটা যাচাই বাছাই করব।”
সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অনিয়ম থাকার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তাদের ওপর প্রতি বছর একটা অডিট হবে। কী পরিমাণ গ্যাসের বরাদ্দ তারা নিয়েছে, সেই পরিমাণ গ্যাস তারা বিক্রি করছে কি না, তাদের সিস্টেম, তাদের মিটারগুলো ক্যালিব্রেশন হবে। লাইনে কোনো সমস্যা আছে কি না দেখা হবে।”
বিতরণ ব্যবস্থা হবে প্রযুক্তিনির্ভর
তিতাসের বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য নতুন বিনিয়োগের নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথাও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “গ্যাসের বিষয়ে আমরা অনেক বড় বড় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চল নিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকার একটা পরিকল্পনা নিয়েছি। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি তিতাস থেকেও কিছু বিনিয়োগ করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।”
প্রায় ৩০ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করার জন্য এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও জাপান ব্যাংক আর্থিক সহযোগিতা দিতে রাজি হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, “এখন কনসালটেন্ট নিয়োগ করে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এই বছরের মধ্যে আমরা টেন্ডারে চলে যাব।”
কোম্পানির উৎস পয়েন্টে মিটার
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ছয়টি কোম্পানির উৎস পয়েন্টে মিটার বসিয়ে গ্যাস গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জননেন্দ্র নাথ সরকার।
তিনি বলেন, “জিটিসিএল (গ্যাস বিতরণ কোম্পানি) ৬৪টি পয়েন্টে ছয়টি বিতরণ কোম্পানিকে গ্যাস দিচ্ছে। প্রতিটি জায়গায় মিটার বসানো আছে। এই ক্ষেত্রে জিটিসিএলের কিছু সিস্টেম লস দেখা যাচ্ছে। আমরা সেটাকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।”
তিতাসকে এখন অঞ্চলভিত্তিক মিটার বসাতে বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ফলে ওই অঞ্চলে কোনো অনিয়ম হলে সেটা ধরা পড়বে।
“কিছুদিন আগে গজারিয়ায় মিটারিংয়ে ধরা পড়ল যে, সেখানে ৪০ শতাংশ সিস্টেম লস। তিতাস এখন প্রতিটি এলাকায় মনিটরিং করে দেখছে কোন এলাকায় বেশি সিস্টেম লস। অনেক রকম চাপ থাকার পরও আমরা শক্ত ছিলাম। অবশেষে গজারিয়ার সেই সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
“এখন যেখানে বেশি সিস্টেম লস দেখব, তখনই বুঝে ফেলব যে ওখানে উচ্ছেদ করতে হবে। এখন নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকায় উচ্ছেদের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”