চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠে যশোরে।
Published : 26 Apr 2024, 12:12 AM
এই মৌসুমে টানা তাপপ্রবাহ সইতে হলো ২৬ দিন; এর আগে কোনো বছরই এত সময় দাবদাহ দেখেনি বাংলাদেশ। এরই মধ্যে চলমান তাপপ্রবাহ আরও সপ্তাহখানেক চলার আভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
এবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপপ্রবাহ শুরু হয় ৩১ মার্চ।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে রেকর্ড ২৬ দিন দাবদাহ হয়েছে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি এপ্রিল মাসেই আমাদের তাপপ্রবাহটা আসে। কিন্তু এ বছরের স্থায়িত্বটা একটু বেশি।”
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, এর আগে টানা সর্বোচ্চ ২৩ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে চলে ২০২৩ সালে। ওই বছরের এপ্রিলের শেষ ১৮ দিন ও মে মাসের শুরুর ৫ দিন দাবদাহ ছিল দেশে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৩১ মার্চে দুয়েক জায়গায় তাপপ্রবাহ ছিল। এখনও চলছে, এটা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।”
বৃহস্পতিবার ৪১ জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এদিন ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থায় দুই দফায় টানা ছয় দিনের সতর্কবার্তার পর এদিন নতুন করে আরও তিন দিনের সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার বুলেটিনে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার উপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুরসহ খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, বান্দরবান ও নোয়াখালী জেলাসহ বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
চলমান এ তাপপ্রবাহ মে মাসের ৪/৫ তারিখ পর্যন্ত চলতে পারে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান।
চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০ এপ্রিল; সেদিন যশোরে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
প্রচণ্ড গরমে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর খবর আসছে। এ কারণে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফে।
বুধবার কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এদিন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় তীব্র গরমে বাড়ির আঙিনায় পড়ে মারা যান এক স্কুল শিক্ষক।
আগের দিন মঙ্গলবার গুলিস্তানের রাস্তায় হাঁটার সময় প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় ঢলে পড়েন এক ব্যক্তি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তি হিটস্ট্রোকে মারা যেতে পারেন বলে ধারণা পুলিশের।
এর আগে ২০ এপ্রিল হিটস্ট্রোকে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। ২১ এপ্রিল মেহেরপুরে গৃহবধূ, সিলেটে রিকশাচালক ও নরসিংদীতে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। এরপর ২২ এপ্রিল ঢাকার সড়কে অচেতন হয়ে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়। হিটস্ট্রোকে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকদের ধারণা।
আরও পড়ুন:
তাপপ্রবাহ: আরো ৩ দিনের সতর্কবার্তা
গরমের ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ শিশুরা: সতর্কতা জারি ইউনিসেফের
গরমে তিন জেলায় নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু