‘আমরা লালনের গান গাই, গান-ই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা' এ স্লোগানে এই সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ করা হয়।
Published : 05 May 2024, 11:51 PM
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে লালনের গান উদ্ধৃত করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় যুবককে আটকের প্রতিবাদ গানে-গানে জানিয়েছেন সিলেট ও যশোরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোর জেলা শাখার উদ্যোগে রোববার বিকেলে শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বরে পরিবেশিত হয় শত কণ্ঠে বাউল গান। এ কর্মসূচি থেকে গানে গানে শিল্পীরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু, জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপংকর দাস রতন।
বক্তারা বলেন, আমাদের দেশের যে-সব মানুষ ঐক্যের বাংলাদেশ চায় না, তারা লালনের দর্শনের বিরোধিতা করে নানা ধরনের চক্রান্তের সৃষ্টি করছেন। তাদের অপতৎপরতায় বিভিন্ন সময়ে বাউলদের চুল কেটে দেওয়া, বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দেওয়াসহ নানা সময় বাধা প্রদান করা হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, এখন যখন কেউ ফেইসবুকে লালনের দর্শন প্রচার করে, তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করার সময় তারা একবারও ভাবলেন না যে এর মধ্যে মূলত লালনকে অপমান করা হচ্ছে। আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা কখনো এ ধরনের অপতৎপরতা গ্রহণ করতে পারি না।
এদিকে ‘আমরা লালনের গান গাই, গান-ই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা' এ স্লোগানে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ করেন লালনের অনুরাগীরা।
রোববার বিকাল ৫টায় ‘আমরা লালন প্রেমী ব্যানারে’ এই প্রতিবাদ কর্মসূচির সমন্বয় করেন সংস্কৃতি কর্মী পল্লব ভট্টাচার্য্য, মৃণাল কান্তি দাশ, নয়ন সরকার নিমু, রেজা রুবেল, জয়ন্ত কুমার দাশ।
কর্মসূচিতে লালন সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রদ্যুত লিটন, সায়েম আহমদ, কনক আচার্য্য।
এই সাংস্কৃতিক প্রতিবাদে সংহতি প্রকাশ করেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আল আজাদ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের পরিচালক অনুপ কুমার দেব, নাট্য সংগঠক নিরঞ্জন দে যাদু, কথাকলি সিলেটের নিলাঞ্জন দাশ টুকু, পাঠশালার পরিচালক হুমায়ুন কবির জুয়েল, থিয়েটার বাংলা সিলেটের সভাপতি তাজুদ মিয়া কামালি, ডিবিসি নিউজের সিলেট ব্যুরো প্রধান প্রত্যুষ তালুকদারসহ সাংস্কৃতিক কর্মীরা। সম্প্রতি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে এক যুবক লালনের গানের চরণ ফেইসবুকে পোস্ট করায় তাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তোলেন কিছু ব্যক্তি; পরে ওই যুবককে আটক করে পুলিশ।
সঞ্জয় রক্ষিত নামের ওই ব্যক্তি পরে জামিন পেলেও এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়।
সঞ্জয়ের পোস্টে লেখা ছিল, 'ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান/নারী লোকের কী হয় বিধান’।
এই পোস্ট ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে, এমন অভিযোগ তুলে তার বাড়ির সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন একদল ব্যক্তি। একপর্যায়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন জামিনে কারামুক্ত হন সঞ্জয়।
আরও পড়ুন
লালন সংগীতের আসর বসল শহীদ মিনারে
শহীদ মিনারে বসছে লালনের গানের আসর, ছড়াবে 'সহনশীলতার বার্তা'