গার্ড অব অনার: নারী কর্মকর্তায় আপত্তি সংসদীয় কমিটির

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাওয়ার সাফল্যের দাবিদার, তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের বাদ রাখতে বলেছে সংসদীয় একটি কমিটি।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2021, 11:41 AM
Updated : 13 June 2021, 11:46 AM

সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা প্রশাসন। ডিসি বা ইউএনও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে থাকেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

অনেক স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নারী কর্মকর্তারা রয়েছেন, আর সেখানেই আপত্তি তুলেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

রোববার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এনিয়ে আলোচনা ওঠার পর সরকারের কাছে সুপারিশ রাখা হয়েছে গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ইউএনওদের বিকল্প খুঁজতে।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় আয়োজন করা এবং মহিলা ইউএনওর বিকল্প ব্যক্তি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।”

কোন যুক্তিতে এই সুপারিশ জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহিলা ইউএনও গার্ড অব অনার দিতে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন।

“মহিলারা তো জানাজায় থাকতে পারেন না। সেক্ষেত্রে মহিলা গার্ড অব অনার দেন, এরকম একটি ব্যাপার আর কী…”

এর আগে বিয়ে নিবন্ধনে নারীরা কাজী হতে পারবে না বলে আইন মন্ত্রণালয় একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। যা আদালত অবধি গড়িয়েছে। হাই কোর্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষে রায় দিলেও সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।

‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিকল্প একটি প্রস্তাবও দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

শাজাহান খান বলেন, “বৈঠকে একটি প্রস্তাব এসেছে। মহিলার বিকল্প একজন পুরুষকে দিয়ে গার্ড অব অনার দেওয়ার বিষয়টি এসেছে। আমরা মন্ত্রণালয়কে এটা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছি।”

সংসদ ভবনে শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির এই বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, রাজিউদ্দিন আহমেদ, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, মোছলেম উদ্দিন আহমদ এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ অংশ নেন।

জিয়া শিশুপার্কের স্থানে মুক্তিযুদ্ধের সৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়া শিশুপার্কের স্থানে মুক্তিযুদ্ধের সৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, “সার্কিট হাউজেরর সামনের যে জায়গাটিতে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, সেখানে জিয়াউর রহমান শিশু পার্ক করা হয়েছে।

“আমরা সেখানে আত্মসমর্পণের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের সুপারিশ করেছি। আমরা বলেছি, সেখানে যে কক্ষটিকে জিয়াউর রহমাকে হত্যা করা হয়েছে, সেটা সংরক্ষিত থাকবে, কিন্তু শিশু পার্কের স্থলে স্মৃতিস্তম্ভ হবে।”

কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সম্পন্ন করার পাশাপাশি রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের সুপারিশও করেছে বলে শাজাহান খান জানান।

কমিটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা সংগ্রহ এবং চিহ্নিত রাজাকারের পরবর্তী প্রজন্মকে সরকারি চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণের সুপারিশও করেছে।