বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত যাননি।
দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত সাংগঠনিক টিম শুক্রবার বিকালে বরিশালের গৌরনদী পৌরসভা ভবনের চত্বরে এ সভা আহ্বান করে।
এ টিমের প্রধান হলেন নৌকার প্রার্থীর বড় ভাই বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।
সভায় বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহও আসেননি; যিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের ভাতিজা।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নকে ঘিরে খোকন সেরনিয়াবাত এবং তার ভাতিজা বর্তমান মেয়রের পক্ষের বিভেদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়।
বিরোধ মেটানোর উদ্দেশ্যে দলের কেন্দ্র থেকে নির্বাচন পরিচালনায় সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয় এবং এর প্রধান করা হয় বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাবা সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে।
আগামী ১২ জুনের ভোটকে সামনে রেখে প্রতীক পাওয়ার পর শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রচারের শুরু হয়।
প্রচারে থাকায় সভায় খোকন সেরনিয়াবাত থাকতে পারেননি বলে তার পক্ষে একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
শুক্রবারের সভায় সভাপতিত্ব করেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাবা ও খোকন সেরনিয়াবাতের বড় ভাই বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “মনকষ্ট থাকতে পারে, কিন্তু নৌকার বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নাই। আমার অতীতের নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সকলে মিলে একাকার হয়ে নৌকার বিজয়ে কাজ করব।”
বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীরা মনে কষ্ট পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি কষ্ট ভুলে দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে সকল নেতাকর্মীকে কাজ করার আহবান জানান।
সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম তার বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনের আগে বরিশালে আসবেন না। তবে তিনি ঢাকায় অবস্থান করে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় দলীয় প্রার্থীকে সহযোগিতা করবেন। ঢাকায় বসে নেতা কর্মীদের দিক-নির্দেশনা প্রদান করবেন।
সাদিক বরিশালে ফিরছেন না কেন–প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, “এটা তো সংবাদ সম্মেলন নয়, আপনার এত প্রশ্ন করছেন কেন?”
সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চারটি সিটি নির্বাচন আমাদের কাছে ব্যারোমিটার বা স্কেল। চারটি সিটি নির্বাচনে আমাদের জয়লাভ করতেই হবে।”
মান-অভিমান ক্ষোভ থাকতেই পারে জানিয়ে নানক বলেন, “আমি ও আব্দুর রহমান গতবার মনোনয়ন পাইনি। কিন্তু আমরা তো থেমে থাকিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্বাচন পরিচালনা করেছি। নিজেদের শ্রম ও মেধা দিয়ে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
কোনোদিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বলিনি কেন মনোনয়ন দেননি। আক্ষেপ করিনি। তার নির্দেশে নির্বাচন পরিচালনার হাল ধরেছি।”
বরিশাল মহানগর আওয়ামী সকল ওয়ার্ডের সভাপতি ও সম্পাদককে উদ্দেশে নানক বলেন, “আপনারা বলেছেন ভাইয়ের নির্দেশ পেলে কাজ শুরু করবেন। ভাইকে নিয়ে এসেছি। সেই নির্দেশ দিতে ভাই এসেছেন। আপনারা স্ব-স্ব ওয়ার্ড থেকে নৌকাকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করাবেন।”
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “আমাদের একটু নৌকার পক্ষে প্রচারণার সুযোগ দিন। আমাদের নৌকা প্রার্থীর পক্ষের কোনো কার্যক্রমে ডাকা হচ্ছে না। আমরা প্রচার করতে চাইলেও আমাদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
এ সময় আবেগতাড়িত হয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন তিনি।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন, আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আকতার, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সদস্য গোলাম রাব্বানী চুন্নু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম তালুকদার ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ।
সভায় অংশ না নেওয়া সম্পর্কে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে ফোন করা হলে তার একান্ত সহকারী রুবেল কথা বলেন।
তিনি বলেন, “পূর্বনির্ধারিত অনেক কর্মসূচি ছিল। সকালে প্রতীক গ্রহণ করেন। এরপর থেকে পূর্বনির্ধারিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে একযোগে মিছিল হয়েছে। তাই তিনি অংশ নেননি।”