গাজীপুর শেষে ভোটের লড়াই এবার খুলনা ও বরিশালে

বরিশালে বিএনপির প্রয়াত মেয়রের ছেলে চ্যালেঞ্জ করছেন নৌকার প্রার্থীকে। খুলনায় নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘আলোচিত’ কেউ নেই।

বরিশাল প্রতিনিধিখুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2023, 09:48 AM
Updated : 26 May 2023, 09:48 AM

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে চমকের ভোট শেষে দেশের দক্ষিণের দুই মহানগরে নির্বাচনী লড়াই শুরু হল।

রাজধানী লাগোয়া জনপদে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে শুরু করেছেন প্রচার।

গাজীপুরের মতই এই দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপি। তবে বরিশালে বিএনপির সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। খুলনায় অবশ্য বিএনপি সংশ্লিষ্ট কেউ ভোটে নেই।

আগামী ১২ জুন এই দুই নগরে ভোট হবে। দুই নগরের মধ্যে খুলনায় আওয়ামী লীগের গতবারের বিজয়ী তালুকদার আবদুল খালেককে নৌকা দিলেও বরিশালে পাল্টনো হয়েছে প্রার্থী।

সেখানে নৌকা পেয়েছেন বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। সাদিক সমর্থকদের সঙ্গে তার বিরোধ স্পষ্ট।

দুই মহানগরেই ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে পাঁচ মহানগরের এই ভোটে দৃষ্টি থাকছে সারা দেশের।

এর মধ্যে ২৫ মে গাজীপুরের ভোটে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে হেরে গেছেন আজমত উল্লা খান। সেখানে জিতেছেন গত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে জয়ী জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

টেবিল ঘড়ি নিয়ে জায়েদা ভোট পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪টি। নৌকা নিয়ে আজমত পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ব্যবধান ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট।

ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন না পেয়ে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। তবে ঋণ খেলাপির জামিনদার হওয়ায় বাদ পড়ে যান। পরে মাকে নিয়ে আগান তিনি।

এই ঘটনায় দেড় বছরের বহিষ্কারাদেশ কাটিয়ে দলে ফেরার চার মাসের মাথায় বিদ্রোহী হয়ে আবার আওয়ামী লীগের পদ হারিয়েছেন জাহাঙ্গীর। ১৬ হাজারের কিছু বেশি ভোটে তার মায়ের ভোটের জয়ের পর অবশ্য তিনি বলেছেন, “গাজীপুরে জয় হয়েছে নৌকার, জয় হয়েছে আওয়ামী লীগের, হেরেছেন ব্যক্তি।”

সেখানে বিএনপির গতবারের প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও সুবিধা করতে পারেননি; পেয়েছেন ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট।

এই ভোটের আগের দিন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ঘোষণা হয় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি। দেশটি জানায়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে তাকে এবং পরিবারের সদস্যদেরকে ভিসা দেওয়া হবে না। এই নীতি সরকারি দল ও বিরোধীদের ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য হবে বলেও জানিয়েছে দেশটি।

গাজীপুরের এই নির্বাচন এবং আমেরিকার এই ঘোষণা ভোটের ‘যুদ্ধে’ তৈরি করেছে নতুন আলোচনা। দুই মহানগরের ভোটার এবং নানা পক্ষের মধ্যেও চলছে নানা সমীকরণ। 

গাজীপুরের প্রভাব ‘বরিশালে নয়’

বরিশালে মেয়র পদে প্রার্থী সাত জন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত নৌকা, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপসকে লাঙল, ইসলামী আন্দোলনের সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম হাতপাখা, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু গোলাপ ফুল নিয়ে লড়বেন।

আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপন মার্কা হিসেবে পেয়েছেন টেবিল ঘড়ি। অপর দুই প্রার্থী আলী হোসেন হরিণ এবং মো. আসাদুজ্জামান লড়বেন হাতি প্রতীক নিয়ে।

শুক্রবার নগরীর নতুল্লাবাদে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। এরপর তারা শুরু করেন আনুষ্ঠানিক প্রচার।

প্রতীক পেয়ে নৌকার খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, “গাজীপুরের নির্বাচনের কোনো প্রভাব বরিশালে পড়বে না। বরিশালের মানুষ আমাকে সৎ ও ভালো মানুষ হিসেবে জানে। নগরবাসীর আমার প্রতি আস্থা আছে।

“আমি নির্বাচিত হতে পারলে সিটি করপোরেশনকে উন্মুক্ত করে দেব। সেখানে সব মানুষের পদচারণা হবে। সবাইকে নিয়ে, পরামর্শ করে এ শহরকে গড়তে চাই “

লাঙ্গলের ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, “গাজীপুরে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমি আশাবাদী বরিশালে আরও বেশি পড়বে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসবে।”

টেবিল ঘড়ির কামরুল আহসান বলেন, “আমার প্রয়াত বাবা আহসান হাবিব কামাল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। তার সঙ্গে মিলিয়ে আমি প্রতীক হিসেবে টেবিল ঘড়ি চেয়েছিলাম। আমি বিজয়ের প্রত্যাশা করছি।”

নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ প্রার্থীও প্রতীক পেয়ে প্রচারে নেমেছেন।

২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন ভোটারের জন্য বরিশালে কেন্দ্র থাকবে ১২৬টি। ভোট কক্ষ থাকবে ৮৯৪টি। 

খুলনায় ভোটের ‘আমেজ কম’

সিটি করপোরেশনের তিনটি নির্বাচনে নেমে দুইবার জয় পাওয়া আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেকের বিপক্ষে এবার দৃশ্যত শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। এ কারণে ভোট নিয়ে অন্য মহানগরের মত সেখানে উৎসাহ উদ্দীপনা কম।

নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করবেন লাঙ্গল নিয়ে জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু, হাতপাখা নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল আউয়াল এবং গোলাপ ফুল নিয়ে জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন ।

এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন আরও তিন জন। তবে যাছাই-বাছাইয়ে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান, আল আমিন মো. আবদুল্লাহ চৌধুরী ও সৈয়দ কামরুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।

ভোটের তফসিল ঘোষণা হলে বিএনপির গতবারের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন “গত সিটি নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সরকার নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। তবে অনেকে মনে করেন নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে, সে জন্য নির্বাচনে যাওয়া উচিত।”

তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমি যাবেন না জানিয়ে বিএনপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন।

শেষ পর্যন্ত ভোটে না আসার বিষয়ে অটল থাকে এবং দলের কেউ সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দেয়।

সেখানে ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডের ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের ৩৯ জন প্রার্থীর মধ্যেও বরাদ্দ করা হয়েছে প্রতীক।

এই সিটি করপোরেশনে ভোটার সংখ্যা পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার। তাদের ভোট নিতে কেন্দ্র থাকবে ২৮৯টি ভোট। এক হাজার ৭৩২টি কক্ষে থাকবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন।