হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন থেকে উঠবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।
Published : 16 Aug 2023, 09:10 PM
রাতে ‘হেলমেট ও মাস্ক পরে’ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রলীগের এক পক্ষের হামলায় আহত অপর পক্ষের এক শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেছেন।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় তাকে অনশনের বসতে দেখা গেছে।
অনশনরত মো. আয়াত উল্লাহ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র।
হামলার ঘটনায় গত ৭ অগাস্ট আয়াত উল্লাহ মামলা করেন বলে জানান নগরীর বন্দর থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল।
মামলা বলা হয়, গত ৫ অগাস্ট রাতে গণিত বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুবাশ্বির রিদম, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী শরীফের নেতৃত্বে কিছু বহিরাগত হামলা চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ও শের-ই বাংলা হল দুটি দীর্ঘদিন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সিটি নির্বাচনের পর সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারীদের দখলে।
৫ অগাস্ট রাতে দুটি হলে নিজেদের আধিপত্য পুনরুদ্ধারের জন্য ছাত্রলীগের একটি পক্ষ হেলমেট ও মাস্ক পরিহিত অবস্থায় এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
অনশনে থাকা আয়াত সাংবাদিকদের বলেন, “ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে মাস্ক ও হেলমেট পরা ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্রসহ হামলা চালায়। হামলাকারীদের মধ্যে ইংরেজি বিভাগের তানজিদ মঞ্জু, গণিত বিভাগের রায়হান ইসলাম ও মোবাশ্বের রিদম এবং হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শরিফুল ইসলামকে চিনতে পারি।”
হামলাকারীরা ডাক-চিৎকারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের সময় যাকে পেয়েছে, তাকেই মারধর করেছে বলে আয়াতের অভিযোগ।
“এ সময় সবার মুখে মাস্ক, মাথায় হেলমেট ও হাতে লম্বা ধারালো অস্ত্র ও লোহার পাইপ ছিল। এরপর দুটি হলে প্রবেশ করে বেশ কিছু কক্ষে ভাঙচুর চালায়। এতে ছাত্রীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৭ জনকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।”
আয়াত আরও অভিযোগ করেন, “হামলার সময় ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া সেদিনের ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত হামলাকারীরা ক্যাম্পাসের হলগুলো দখল করে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন চালিয়েছে। তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
তবে আয়াতের পক্ষের হিসেবে পরিচিত অমিত হাসান রক্তিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার একটা সমাধান হয়েছে। কিন্তু আয়াত একান্ত ব্যক্তিগতভাবে দুপুর ১টা থেকে অনশন শুরু করেছেন। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
“বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসে তাকে জানিয়েছে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
কিন্তু হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন থেকে উঠবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আয়াত।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক ছাত্র অনশনে বসেছে শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবদমান দুটি পক্ষ হামলা-পাল্টা হামলায় জড়িয়েছিল। অনশনকারী একটি পক্ষের হয়ে পাল্টা হামলায় অংশ নিয়েছে। সেখানে সে আহত হয়েছে।
“এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রক্টর আরও বলেন, “দুদিন আগে বিবদমান দুটি পক্ষ নিজেরা সমঝোতা করেছে। দুটি পক্ষ ক্যাম্পাসে সহাবস্থানে রয়েছে। তারা এক হয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।
আমার ধারণা, ওই শিক্ষার্থী উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এ অনশন করছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। এজন্য তার আইনের আশ্রয় নিতে হবে।”
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের বন্দর থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আয়াতের মামলা নেওয়া হয়েছে। দুপক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করেছে। এখন কী করার আছে?”
আরও পড়ুন:
হামলাকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আহত ছাত্রলীগ কর্মীর অভিযোগ
হেলমেট পরে মধ্যরাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা, তদন্তে কমিটি