অভিযানের স্বার্থে চালক ও তার সহকারীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
Published : 22 Jul 2023, 09:12 PM
চালকের উদাসীনতা, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাই ঝালকাঠিতে বাস দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ।
এরই মধ্যে চালক ও তার সহকারীর পরিচয় শনাক্ত হয়েছে জানিয়ে রাজাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাসুদ রানা বলেন, বেঁচে ফেরা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে এই তিনটি কারণই উঠে এসেছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় খুলনা-ঝালকাঠি সড়কে যাত্রীবাহী বাস পুকুরে পড়ে উল্টে গেলে ১৭ জন নিহত হন।
যাত্রীদের অভিযোগ, চালকই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তাই তাকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন তারা।
চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে জানিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, অভিযানের স্বার্থে তাদের নাম ও পরিচয় এখন প্রকাশ করা যাবে না।
বাসটির ছাদেও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল। ছাদের যাত্রীরা দ্রুত সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ভেতরের যাত্রীরা পারেননি।
দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা কয়েকজন যাত্রী বলেছেন, বাসে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী ছিল। চালকের সাবধানতার অভাবও ছিল। যাত্রীরা বলছেন, দুর্ঘটনার সময় চালক এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে ছিলেন। ফলে হঠাৎ করে বিপরীতমুখী একটি গাড়িকে সাইড দিতে গেলে তিনি আর গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য মো. বাবু। তিনি বলেন, “সেই সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বিপরীতমুখী একটি গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় বাশার স্মৃতি পরিবহনের বাসটি। এসময় বাসটি পাশের পুকুরে পড়ে গেলে চালক বের হয়ে পালিয়ে যায়। সেসময়ই পানির ভেতর উল্টে যায় বাসটি।”
দ্রুত এলাকাবাসী এবং আশপাশের দোকানদাররা যাত্রীদের উদ্ধারে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েন জানিয়ে মো. বাবু বলেন, “বাসটির পেছনের কিছু অংশই কেবল পানির ওপরে ভেসে ছিল। আশপাশের মানুষ পানিতে ডুব দিয়ে জানালা ভেঙে প্রথমে আটটি লাশ উদ্ধার করে। ১৩জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
এসময় জানালার কাঁচে উদ্ধারকারীদের বেশ কয়েকজন আহত হলেও উদ্ধারকাজে প্রশাসন যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা কাজ চালিয়ে যান বলে জানান এই ইউপি সদস্য।
উদ্ধারকারীদের দলে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আক্কাস সরদার।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এক বৃদ্ধা মহিলার পা ধরে টেনে আনার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তিনি বাসের ভিতরের রড এমনভাবে ধরে ছিলেন যে কোনোভাবেই তাকে বের করা যাচ্ছিল না। পরে বহু কসরত করে রড থেকে হাত ছুটিয়ে তাকে জীবিত উদ্ধার করি।”
উদ্ধারের সময় কে জীবিত আর কে মৃত তা খেয়াল করা সম্ভব ছিল না জানিয়ে স্থানীয় দোকানী মো. রনি বলেন, “আমরা চেয়েছি সবাই বেঁচে থাকুক। ১০ থেকে ১২ জনকে উদ্ধারের পর একটি শিশুর হাতের স্পর্শ পাই। দ্রুত হাতটি টেনে শিশুটিকে তুলে আনি। এরপর তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।“
সকালে সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ছত্রকান্দা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসটি উল্টে পুকুরে পড়ে গিয়ে এ দুঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে আটজন নারী, ছয়জন পুরুষ ও তিনজন শিশু।
নিহতরা হলেন- ভাণ্ডারিয়া পৌর এলাকার পান্না মিয়ার ছেলে তারেক রহমান (৪৫), একই এলাকার মুজাফফর আলীর ছেলে সালাম মোল্লা (৬০), রাজাপুর উপজেলার নিজামিয়া গ্রামের মৃত মাওলানা নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪৩), তার কন্যা খুশবো আক্তার (১৭), ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার মৃত সালাম মোল্লার ছেলে শাহীন মোল্লা (২৫), ভাণ্ডারিয়ার পশারিবুনিয়া এলাকার জালাল হাওলাদারের কন্যা সুমাইয়া (৬), বাকেরগঞ্জের চর বোয়ালিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (৮), ভাণ্ডারিয়া রিজার্ভ পুকুর পাড় এলাকার মৃত লাল মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম (৬০), মৃত লাল মিয়া হাওলাদারের ছেলে আবুল কালাম হাওলাদার, মেহেন্দিগঞ্জের মোর রিপনের কন্যা নিপা মনি (১), তার মা আইরিন আক্তার (২২), রাজাপুরের বলাইবাড়ি এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে নয়ন (১৬), ভাণ্ডারিয়ার উত্তর শিয়ালকাঠি এলাকার মৃত ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৮০), কাঠালিয়ার বাঁশবুনিয়া এলাকার তৈয়বুর রহমানের কন্যা সালমা আক্তার মিতা (৪২)।
আরও পড়ুন:
ঝালকাঠিতে বাস পুকুরে: ১৫ জনের পরিচয় মিলেছে, দুজন মর্গে
পুকুরের গভীরতার কারণেই মৃতের সংখ্যা বেড়েছে: ফায়ার সার্ভিস
ঝালকাঠিতে বাস উল্টে পুকুরে, নিহত ১৭
ঝালকাঠিতে বাস উল্টে পুকুরে: তদন্তে জেলা প্রশাসনের ৫ সদস্যের কমিটি