আহত অবস্থায় ২১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Published : 22 Jul 2023, 08:33 PM
ঝালকাঠি সদর উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে উল্টে যাওয়া বাসে নিহত ১৭ যাত্রীর পরিচয় মিলেছে।
স্বজনরা শনাক্তের পর মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান।
তিনি আরও বলেন, বাকি দুটি মরদেহ এখনও ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। স্বজনরা এসে পরিচয় শনাক্ত করলে এ দুটি মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ছত্রকান্দা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসটি উল্টে পুকুরে পড়ে গিয়ে এ মর্মান্তিক দুঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় অন্তত ৩০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বাশার স্মৃতি পরিবহনের বাসটি ভাণ্ডারিয়া থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ছত্রকান্দায় পৌঁছে বাসের চাকা ফেটে গেলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান এবং বাসটি উল্টে রাস্তার পাশে পুকুরে পড়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বলছে, পুকুরটি বেশ গভীর হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। বাসটি টেনে তোলার জন্য ক্রেন নিয়ে আসা হয়। নিহতদের মধ্যে আটজন নারী, ছয়জন পুরুষ ও তিনজন শিশু।
নিহতরা হলেন- পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া পৌর এলাকার পান্না মিয়ার ছেলে তারেক রহমান (৪৫), একই এলাকার মুজাফফর আলীর ছেলে সালাম মোল্লা (৬০), মৃত সালাম মোল্লার ছেলে শাহিন মোল্লা (২৫), একই উপজেলার পশারিবুনিয়া এলাকার জালাল হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া (৬), রিজার্ভ পুকুর পাড় এলাকার মৃত লাল মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম (৬০), রহিমার ছেলে আবুল কালাম হাওলাদার, উত্তর শিয়ালকাঠি এলাকার মৃত ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৮০) ও তেলীখালী এলাকার রাসেল সিকদারের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (২৪)।
বরিশাল সদরের মৃত মুকেল বয়াতির স্ত্রী পারভিন আক্তার (৫৩), বাকেরগঞ্জের চর বোয়ালিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (৮), মেহেন্দিগঞ্জের রিপনের মেয়ে রিপা মনি (২) ও তার মা আইরিন আক্তারও (২২) মারা গেছেন।
নিহতদের মধ্যে আছেন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার নিজামিয়া গ্রামের মৃত মাওলানা নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪৩), তার মেয়ে খুশবু আক্তার (১৭), বলাইবাড়ি এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে নয়ন (১৬), বাঁশবুনিয়া এলাকার তৈয়বুর রহমানের মেয়ে সালমা আক্তার মিতা (৪২) এবং শৌলজালিয়া এলাকার মৃত কাঞ্চন তালুকদারের ছেলে ফারুক হোসেন তালুকদার (৫৫)।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন, কাঁঠালিয়ার আবুল বাশার, রিজিয়া, আরজু, ভাণ্ডারিয়ার রাসেল মোল্লা, মনিরুজ্জামান, ফাতিমা, রাসেল, নলছিটির মিফতা, আজিজুল, রাজাপুরের মনোয়ারা, আলাউদ্দিন, সোহেল, আবুল কালাম, ভোলার সুইটি, বাউফলের সিদ্দিকুর, রুকাইয়া, বরগুনার আকাশ, সাতক্ষীরার সোহাগ, মঠবাড়িয়ার নাঈমুল, ঝালকাঠির আল-আমিন ও বরিশালের সাব্বির।
পুকুরের গভীরতার কারণেই মৃতের সংখ্যা বেড়েছে: ফায়ার সার্ভিস
এ ছাড়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আল মামুন। ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন তার শ্যালিকা শিল্পী।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিকাল ৫টার দিকে হাসপাতাল মর্গ থেকে স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সে করে একে একে মরদেহ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেন। দাফন কাজ করার জন্য নিহতদের স্বজনদের ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আহতদের চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, কোনো কোনো যাত্রী বলেছেন যে চালক মোবাইল টেলিফোনে কথা বলছিলেন। আবার কারো অভিযোগ, যাত্রীদের কাছ থেকে তোলা মোট ভাড়া সহকারীর কাছ থেকে গাড়ি চালানোর সময়ই বুঝে নিচ্ছিলেন চালক। সে সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এর কোনোটিই প্রমাণিত নয়।
ঝালকাঠিতে বাস উল্টে পুকুরে, নিহত ১৭
ঝালকাঠিতে বাস উল্টে পুকুরে: তদন্তে জেলা প্রশাসনের ৫ সদস্যের কমিটি
যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, বাশার স্মৃতি পরিবহনের বাসটিতে ভেতরে প্রচুর যাত্রী দাঁড়িয়েও ছিলেন। যাত্রাপথে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাসভর্তি করে যাত্রী তোলা হয়। একপর্যায়ে ভেতরে জায়গা না পেয়ে যাত্রীদের ছাদের উপরে তোলা হয়।
ফলে বাসটিতে কত যাত্রী ছিল সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্ঘটনার পর চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।