ভোর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন সীমান্তবাসী।
Published : 10 Sep 2022, 08:24 PM
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সারাদিনই মুহুর্মূহু গুলি ও ভারী গোলাবারুদের শব্দ শুনতে পেয়েছেন স্থানীয়রা; এ নিয়ে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শনিবার ভোর থেকে ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাছাকাছি কয়েক কিলোমিটার এলাকায় সবসময় গুলির শব্দ শুনা যায় বলে জানান ইউপি সদস্য মো. আলম।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এই সদস্য বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোর ৫টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গোলাগুলি চলেছে। তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার কোণাপাড়ায় যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা রয়েছে তার পূর্বদিক থেকে বেশি গুলির শব্দ শুনা গেছে।”
৩টার পর গুলির শব্দ থেমেছে জানিয়ে ইউপি সদস্য বলেন, আজ কোনো যুদ্ধবিমান ও ফাইটার হেলিকপ্টার দেখা যায়নি। সীমান্ত এলাকাজুড়ে বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা সবসময় সর্বোচ্চ সতর্কবাস্থায় রয়েছে।
“এক-দুইদিন পর পর দিনের কোনো একটা সময় গুলির শব্দ আসে। মনে হয়, তাদের ওইদিকে এভাবে আরও অনেক দিন চলবে। এপারে আমাদের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।”
মিয়ানমার বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, বেশ কিছুদিন ধরেই রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বোমা বর্ষণ করছে। সংঘাতের মধ্যে গত ২৮ অগাস্ট বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে।
এরপর ৩১ অগাস্ট রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহরতলীতে আরাকান আর্মির সদস্যরা একটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে হত্যা করে বলে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়। আরাকান আর্মির দখলে নেওয়া পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিতে সেনাবাহিনী এগোচ্ছে।
এর মধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টারে গোলা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে।
এসব ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে দুইবার ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “এটা উসকানিমূলক না। এটা স্ট্রে (আকস্মিক চলে এসেছে)।”
টানা তিন সপ্তাহ ধরে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়ার পর ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ফের গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া গেলেও কোনো যুদ্ধবিমান বা ফাইটিং হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়নি। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পারছেন তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দারা।
এদিকে ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি দল এখনও তুমব্রুর সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। সেখানে ৬২১টি পরিবারের চার হাজার ২৮০ জন রোহিঙ্গা রয়েছেন বলে জানান কোণাপাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের মাঝি (দলনেতা) দিল মোহাম্মদ।
শনিবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দিল মোহাম্মদ বলেন, “ভোর থেকে আমাদের কোণাপাড়া ক্যাম্প থেকে শুরু করে মিয়ানমার অভ্যন্তরে কয়েকটি এলাকায় আনুমানিক এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অনেক গোলাগুলি চলে। একদম ভোরবেলা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত একটানা গুলি চলছিল।
“একদম সীমান্তের বরাবর হওয়ায় আমরা কোণাপাড়ার আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গারা সবসময় ভয় ও আতঙ্কে থাকি।”
সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি জানতে কক্সবাজার বিজিবি-৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মেহেদী হোসাইন কবিরকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এ ছাড়া চেষ্টা করেও জেলা পুলিশ প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।