সীমান্তে মিয়ানমারের গোলাগুলি বন্ধ হলেও আতঙ্কে স্থানীয়রা

টানা তিন সপ্তাহ গোলাগুলির পর রোববার কোনো শব্দ পাননি সীমান্তের বাসিন্দারা।

উসিথোয়াই মারমাবান্দরবান প্রতিনিধি.বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2022, 03:56 PM
Updated : 4 Sept 2022, 03:56 PM

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর গোলাগুলি ‘আপাতত’ বন্ধ হয়েছে; তবে সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা আতঙ্কের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাতের মধ্যে দেশটির যুদ্ধবিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে গোলাবর্ষণ করে।

এ নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে দুইবার ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “এটা উসকানিমূলক না। এটা স্ট্রে (আকস্মিক চলে এসেছে)।”

টানা তিন সপ্তাহ ধরে গোলাগুলির আওয়াজ পেলেও রোববার কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আলম।

তিনি বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকাগুলোতে কোনো গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি; যার কারণে আমাদের স্থানীয়দের মধ্যেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে।”

“দুপুর ১টার দিকে তুমব্রু সীমান্তে ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার ছয় কিলোমিটার মধ্যে মিয়ানমারের সীমান্তের অভ্যন্তরে একটি হেলিকপ্টার উড়ে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু কোনো গুলিবর্ষণ করা হয়নি।”

গোলাগুলি আপাতত বন্ধ হলেও সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য।

মিয়ানমার বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বোমা বর্ষণ করে।

বুধবার রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহরতলীতে আরাকান আর্মির সদস্যরা একটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে হত্যা করে বলে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়। আরাকান আর্মির দখলে নেওয়া পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিতে সেনাবাহিনী এগোচ্ছে।

সংঘাতের মধ্যে গত ২৮ অগাস্ট দুপুরে বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। শনিবার মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টারে গোলা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে।

ঘুমধুম ইউনিয়নের সদস্য মো. আলম বলেন, “তিন সপ্তাহ ধরে সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়মিত প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ করে শনিবার তাদের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা আমাদের সীমান্ত পিলারে এসে পড়ে। এর আগেও দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা হয়নি ঠিক। তবে সীমান্ত বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।”

সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি হলেও এপারে বাসিন্দারা কাছাকাছি হওয়ায় স্বাভাবিক কারণে আতঙ্কিত অবস্থায় থাকেন বলেও জানান ইউপি সদস্য।

তিনি আরও বলেন, “আজকে পরিস্থিতি শান্ত বলা যায়। তবে কোন সময় আবার কী পরিস্থিতি তৈরি হয় বুঝা যায় না। বর্তমানে সীমান্ত এলাকাজুড়ে নিরাপত্তার বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোলাগুলির কারণে অনেকেই বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। তারা সীমান্ত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার চেষ্টা করছেন। সীমান্ত এলাকায় রাবার বাগানে যেসব শ্রমিক কাজ করেন তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আপাতত সেখানে শ্রমিকরা কাজ করতে যাচ্ছেন না।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মোট ২০ হাজার বাসিন্দার ঘুমধুম ইউনিয়নে ৩ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্ত এলাকায় ওপারের পরিস্থিতির প্রভাব এসে পড়ে। রোববার সকাল থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। আজ সকাল থেকে বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিতে দেখা গেছে।

এদিকে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা ৬২১টি পরিবারে চার হাজার ২০০ রোহিঙ্গা এখনও তুমব্রু সীমান্তের কোনাপাড়ার শূণ্যরেখার আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। গোলাগুলির কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

বিকালে ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিষয়টি উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, “যে জায়গাগুলোতে এটা (গোলাগুলি) হচ্ছে, সেখানে রোহিঙ্গারা থাকেন না। রোহিঙ্গারা থাকেন ঠিক তার বিপরীত দিকে, ইস্টার্ন সাইডে। এটা হচ্ছে পশ্চিমে, আমাদের বর্ডার ঘেঁষে একেবারে। যে জায়গাটা এরই মধ্যে একেবারেই রোহিঙ্গাশূন্য হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর ধরে।”

শূন্যরেখার অবস্থান করা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলে আসতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “২০১৭ সালে আমাদের কাছে যে তথ্যগুলো ছিল না, এখন অবশ্যই কিছুটা হলেও আছে। সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা কমেন্ট করতে চাই না। আমরা এবার অন্ততপক্ষে কোনো ঢলের শঙ্কা করছি না বা আশাও করছি না।”

সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি জানতে কক্সবাজার-৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মেহেদী হোসাইন কবিরকে ফোন করা হলে তিনি কল কেটে খুদেবার্তা পাঠাতে বলেন। পরে খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি বিজিবি অধিনায়ক।

তবে বিজিবি পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান শনিবার ঢাকায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তারা প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছেন এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন।

আরও পড়ুন:

Also Read: মিয়ানমারের দূতকে ফের ডেকে নিয়ে গোলাবর্ষণের প্রতিবাদ

Also Read: মিয়ানমারের নাগরিকদের ঢুকতে দেওয়া হবে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

Also Read: বান্দরবান সীমান্তে এবার পড়ল মিয়ানমারের যুদ্ধবিমানের গোলা: পুলিশ

Also Read: মর্টার শেল: মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব, কড়া প্রতিবাদ ঢাকার

Also Read: মিয়ানমার থেকে উড়ে এসে বান্দরবান সীমান্তে পড়ল দুটি মর্টার শেল

Also Read: মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল: ‘কড়া’ প্রতিবাদ জানাবে বাংলাদেশ