মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ভুল করে’ গোলা চলে এসেছে বাংলাদেশ সীমান্তের এপারে।
Published : 04 Sep 2022, 08:37 PM
মর্টার শেল এসে পড়ার এক সপ্তাহ না গড়াতেই মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশের সীমানার ভেতর গোলাবর্ষণের ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ফের তলব করেছে সরকার।
রোববার রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মো-কে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
এর আগে মিয়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় সোমবার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছিল ঢাকা।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষে রোববার ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে মোমেন বলেন, “আমরা আজকেও তাদের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিলাম। আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা, আমরা তাদেরকে সব প্রতিবাদ জানিয়েছি।
“ওরা বলেছে যে, এটা মোটেই উস্কানিমূলক না। এটা স্ট্রে (আকস্মিক চলে এসেছে)।”
গত ২৮ অগাস্ট দুপুরে বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। শনিবার মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টারে গোলা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে।
এসব গোলা ‘ভুল করে’ চলে আসছে বলে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে।
বান্দরবান সীমান্তে এবার পড়ল মিয়ানমারের যুদ্ধবিমানের গোলা: পুলিশ
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত হচ্ছে। সেই সংঘাতের ফলে আমাদের এখানেও বোমা পড়েছে।
“ওরা বলেছে এগুলো স্ট্রে, এর পেছনে কোনো মোটিভ নাই। আমাদের তারা কোনো উস্কানি দিচ্ছে না। তারা (মিয়ানমার) বলেছে বাই মিসটেক (ভুল করে) এখানে এসে পড়ে গেছে।”
মিয়ানমার বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বোমা বর্ষণ করে।
বুধবার রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহরতলীতে আরাকান আর্মির সদস্যরা একটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে হত্যা করে বলে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়। আরাকান আর্মির দখলে নেওয়া পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিতে সেনাবাহিনী এগোচ্ছে।
সংঘাতের ফলে মিয়ামনার নাগরিকরা যাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে না পারে, সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক পাহারায় রাখা হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা মোটামুটিভাবে আমাদের নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছি। ওইটা আপনারা জানেন যে, বেশ সংঘাত হচ্ছে, তার ফলে আমাদের ভয় হলো এই পারসিকিউটেড লোক যদি আবার আমাদের দেশে ঢোকার চেষ্টা করে।
“এজন্য আমরা আমাদের যত বর্ডার গার্ড বা অন্যান্য সিকিউরিটি অ্যাপারেটাস আছে, সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি। আমরা প্রস্তুত, কেউ যাতে এখানে না আসতে পারে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি সবসময় আশাবাদী। এই ঘটনার ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যে প্রোগ্রাম আমরা হাতে নিয়েছি, সেটা বাধাগ্রস্ত হবে না।”
‘রোহিঙ্গা ঢলের শঙ্কা নেই’
সংঘাতের ফলে বাংলাদেশের দিকে আবার রোহিঙ্গা ঢল হওয়ার কোনো আশঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই বলে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, “২০১৭ সালে আমাদের কাছে যে তথ্যগুলো ছিল না, এখন অবশ্যই কিছুটা হলেও আছে। সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা কমেন্ট করতে চাই না। আমরা এবার অন্ততপক্ষে কোনো ঢলের শঙ্কা করছি না বা আশাও করছি না।”
সংবাদমাধ্যমের তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “যে জায়গাগুলোতে এটা হচ্ছে, সেখানে রোহিঙ্গারা থাকে না। রোহিঙ্গারা থাকে ঠিক তার বিপরীত দিকে, ইস্টার্ন সাইডে। এটা হচ্ছে পশ্চিমে, আমাদের বর্ডার ঘেঁষে একেবারে। যে জায়গাটা ইতিমধ্যে একেবারেই রোহিঙ্গাশূন্য হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর ধরে।
“তো আমরা আশা করছি, এবার কোনো রোহিঙ্গা ঢল হবে না। এটা হওয়ার সম্ভাবনা নাই, আমরা নিশ্চিতভাবে বলেছি। আমরা নতুন করে কাউকে অ্যালাও করব না বাংলাদেশের সীমান্ত পার হয়ে আসতে।”