“প্রতিপক্ষের লোকজন হাসপাতাল ঘেরাও অ্যাম্বুলেন্সসহ সব যানবাহন আটকে দেয়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান পিকলুকে বরিশাল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।”
Published : 03 May 2024, 12:46 AM
বরিশালের গৌরনদীতে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ তিনজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার বাটাজোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে গৌরনদী মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান।
আহতরা হলেন- গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক পৌর মেয়র চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমানের সমর্থক দেলোয়ার হোসেন দিলু, উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরীর সমর্থক ও মাহিলারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলু এবং তার মোটরসাইকেলের চালক পলাশ হাওলাদার।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, গত রমজানে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর আগৈলঝাড়ার সেরাল বাসভবনে দুই উপজেলার (আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী) আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এক সভা হয়। ওই সভায় গৌরনদীতে আওয়ামী লীগের একমাত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে পৌর মেয়র হারিছুর রহমানকে এবং আগৈলঝাড়ায় সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহর নাম ঘোষণা করা হয়।
বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে আশিক আব্দুল্লাহ প্রার্থী না হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছুর রহমান প্রার্থী হন। তার সঙ্গে আরও তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান (তিনি পৌর মেয়র হারিছুর রহমানের ভাই) এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া।
এই তিন প্রার্থী হারিছুরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একসঙ্গে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এবং শেষ পর্যন্ত তারা একজনই লড়বেন বলে জানিয়েছেন।
এর মধ্যেই রাতে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। যেখানে দুপক্ষের নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বাটাজোর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেন মারা গিয়েছেন। রাতে তার জানাজায় অংশ নিতে বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে আসেন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া এবং ইউপি চেয়ারম্যান পিকলু।
আরও পড়ুন:
ঘোষণা দিয়েও প্রার্থী হননি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে
পরে সেখানে প্রতিপক্ষ হারিছুর রহমানের সমর্থকরাও আসেন। তখন দুইপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আহত ইউপি চেয়ারম্যান পিকলুর স্ত্রী বিপাশা গুহ বলেন, “আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানে নেওয়ার পর হারিছুর রহমানের ক্যাডাররা পিকুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাসপাতাল ঘেরাও করে। তখন প্রধান গেট আটকে তাকে রক্ষা করা হয়।
“হামলাকারীরা গেইট ভেঙে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তারা হাসপাতাল কম্পাউন্ডে থাকা অ্যাম্বুলেন্সসহ সব যানবাহন সরিয়ে দেয়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী ও পুলিশ সদস্যরা এসে আহতদের বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়”, বলেন বিপাশা গুহ।
গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন, “কুপিয়ে জখম হওয়া পিকলুকে বরিশাল হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স খবর দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষের লোকজন হাসপাতাল ঘেরাও করে। তারা অ্যাম্বুলেন্সসহ সব যানবাহন আটকে দেয়। পরে পিকলুকে বরিশাল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।”
আহত দেলোয়ার হোসেন দিলুর ভাই বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, “আমি অসুস্থ। কী ঘটেছে আমি জানি না। শুনেছি নির্বাচনি প্রচারে হামলা হয়েছে। এতে দিলু গুলিবিদ্ধ হয়েছে ও পিকলুকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে শুনেছি।”
আহত দেলোয়ার হোসেন দিলুর দাবি, ইউপি চেয়ারম্যান পিকুল তাকে গুলি করে। পরে স্থানীয়রা এসে প্রতিরোধ করলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন বলেন, “তিনজন জখম অবস্থায় এসেছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তিনজনকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।”