“১১ মে এমপি আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ১৬ মে থেকে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না।”
Published : 19 May 2024, 08:53 PM
ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়ে চার দিন ধরে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার।
রোববার সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ বলেন, “১১ মে এমপি আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ১৬ মে থেকে তার সঙ্গে বারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না।”
এমপির পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকজনকে খোঁজ জানার জন্য ভারতে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, “শনিবার ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে দলের জেলা কমিটির বর্ধিত সভা ছিল। ওই সভায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের আসার কথা ছিল।
“তাকে ফোন করেছি। কিন্তু ফোনে যোগাযোগ করতে পারিনি। পরে জানতে পারি তিনি ভারতে গেছেন। তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানিয়েছি। সংসদ সদস্যের সন্ধান চলছে।”
জেলার পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান বলেন, শনিবার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি তাকে জানানো হয়। তারপর বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রোববার বিকাল পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম আনার ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ডিবি কার্যালয়ে এমপি-কন্যা
সংসদ সদস্য আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন সাংবাদিকদের বলেন, “তিনদিন ধরে আমার বাবাকে ফোনে পাচ্ছি না। কখনও তার ফোন খোলা থাকে, বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ পাচ্ছি। তখন আমি হারুন আঙ্কেলের (ডিবি প্রধান) সঙ্গে যোগাযোগ করি। হারুন আঙ্কেল বলেছেন, বিষয়টা তারা দেখতেছেন। আমি নিজেও ভারতে যাব। তার আগে আসলাম এখানে জানতে যে, কেন তাকে ফোনে পাচ্ছি না বা ফোন কখনও খোলা, কখনও বন্ধ থাকছে- এসব নিয়ে কথা বলতে।”
এক প্রশ্নের জবাবে ডোরিন বলেন, “তিনি রেগুলারই ভারতে যান। তার কানে মেজর সমস্যা আছে। তার একটা কান পুরোপুরি বন্ধ, এই কারণে যেতে হয়।”
তিনি কোথায় গেছেন জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ডোরিন বরেন, “তিনি রেগুলারই যান। যাওয়ার পর সেখানে এক বন্ধুর বাসায় উঠেছিলেন। পরদিন বের হন। ওই আঙ্কেলের (সংসদ সদস্যের বন্ধু) ভাষ্যমতে, বের হওয়ার পর তাকে আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ফোন ধরছেন না, বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।”
সংসদ সদস্যকে অপহরণ করা হয়েছে এরকম কিছু সন্দেহ করছেন কিনা জানতে চাইলে মেয়ে বলেন, “না আমরা পারিবারিকভাবে এরকম কিছু সন্দেহ করছি না।”
ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে কারও সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে সংসদ সদস্যের কন্যা বলেন, “ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলে তো তিনি যাওয়ার সময় আমি সবাইকে জানাতাম না। তিনি যখন ১২ মে ভ্যানে করে ভারত যাচ্ছিলেন আমি নিজেই সেই ভিডিও ফেইসবুকে আমার পেজে পোস্ট করেছি। আপনারা দেখতে পারেন।”
ডোরিন বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তিনিও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, “এমপি আনার ওই গেদে বর্ডার দিয়ে নিয়মিত ভারতে যান। তার কানে সমস্যা, তিনি সেটার চিকিৎসার জন্য যান। যেখানে গিয়ে ওঠেন তার বন্ধু গোপালের কাছে, সেখান থেকে তার নিখোঁজের তথ্যটি পাওয়া গেছে।
“এখন তার কন্যাসহ পরিবার আমাদের কাছে এসেছেন। যেহেতু ঘটনাস্থলটা ভারত সেজন্য আমরা সেখানকার পুলিশের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলছি, বিভিন্ন নম্বরগুলোতে আমরা চেক করছি কার কার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে। আর ভারতের পুলিশও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করছে। আমরা যখন যখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তারা সাড়া দিচ্ছে।”
‘উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই’
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “সংসদ সদস্য আনার পুরনো মানুষ, একজন সংসদ সদস্য, বুঝে-শুনেই তো চলেন। পাশের দেশ ভারতে গেছেন। এমন তো না মায়ানমার গেছেন, যে মারামারি লেগেছে। আমার মনে হয় তিনি এসে পড়বেন।”
তিনি বলেন, “আমাদের এনএসআই কাজ করছে। ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।”
এদিকে সংবাদমাধ্যমের বরাতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, সংসদ সদস্যের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনায় উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বরাহনগরে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।