“গরমে জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছিল। বৃষ্টি দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারিনি, ভিজলাম।”
Published : 03 May 2024, 12:53 AM
আবহাওয়া পূর্বাভাসে আগেই ছিল বৃষ্টির সম্ভাবনা; দিনের বেলায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হলেও ঢাকা ছিল খটখটে। বৃষ্টির পানিতে স্বস্তির আশায় থাকা মানুষের মনপ্রাণ ভরিয়ে গভীর রাতে মিলল বজ্রসহ বৃষ্টির দেখা।
পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর এলাকায় রাত ১২টার দিকে তুমুল বৃষ্টি ও ঝড় হতে থাকে। প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে বিকট শব্দে হয় বজ্রপাতও।
মিরপুর ১২ নম্বরের বিভিন্ন বাসার বারান্দায়, ছাদে, রাস্তায়, বৃষ্টিতে ভিজে উল্লাস করতে দেখা যায়। কেউ কেউ স্লোগানও দেন।
তারা বলছেন, দীর্ঘ অপেক্ষার বৃষ্টি জাগিয়ে তুলেছে ছেলেবেলার আবেগ।
উত্তরা, খিলক্ষেত, মগবাজার, ষাট ফিট এলাকাতেও বৃষ্টি হতে থাকে।
এখানকার বাসিন্দা লুৎফুন্নাহার ফুরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তীব্র গরমে শান্তি পাচ্ছিলাম না, এখন বৃষ্টি হচ্ছে- বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুহাত ভেজালাম, তারপর বৃষ্টিতেও ভিজলাম। অনেক অপেক্ষার পর এসেছে, আনন্দ তো হবেই।”
এই মৌসুমে দেশে তাপপ্রবাহ শুরু হয় ৩১ মার্চ থেকে। দেশের ইতিহাসে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ৩৩ ধরে চলা তাপপ্রবাহের মধ্যে ৩০ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে। সেদিন ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতদিন দেশের বড় অংশে বৃষ্টির কোন দেখা পাওয়া যায়নি।
অনেকের মত মিরপুর-১২ নম্বরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব তাসলিমা বেগমের কাছেও এ বৃষ্টি ছিল বহুল প্রত্যাশিত।
তিনি বলেন, ‘‘এই ভ্যাপসা গরমে মানুষের জান যায় যায়। এখন একটু শান্তি আসবে।"
গৃহকর্মী সুরমা বেগম তীব্র গরমে কয়েক রাত ঘুমাতে পারেননি। বৃষ্টিতে তার চার ছেলেমেয়েই রাতেও ভিজেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সুরমা বলেন, "আপা গো, গরমে আমার পোলাপাইনের শরীলে গামাচি উইঠ্যা গেছিল। কয় রাত যে ঘুমাইতে পারি নাই! প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যাতে বৃষ্টি নামায়, তাইলে গরমটা কমব। আইজকা আইল। কি যে আনন্দ লাগতাছে!"
বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা একরাম হোসেনও।
তিনি বলেন, “গরমে জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছিল। বৃষ্টি দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারিনি। ভিজলাম, পরে ঠান্ডা বাতাসে আবার ঘরে চলে এসেছি। মেঘের গর্জন হচ্ছে, বজ্রপাতও হচ্ছে বেশ।"
বৃষ্টির কারণে গরম কমে আসবে বলেও ধারণা তার।
যাত্রাবাড়ী এলাকার কাজলার বাসিন্দা আরিফুর রহমান শাকিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টির দেখা মিলেছে এতেই শান্তি; ঠান্ডা বাতাস বইছে, গরমের কষ্ট কমেছে এতে।”
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুরো ঢাকাতেই বৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে এতে। কালকে দিনের তাপমাত্রাও কম আসবে।”
ঢাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও নরসিংদীর মাধবদীতেও ঝুম বৃষ্টির খবর মিলেছে।