খুলনা সিটি ভোট: সম্পদে খালেক, আয়ে মধু এগিয়ে, পিছিয়ে আউয়াল

খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন সাতজন, তাদের মধ্যে চারজনের বাতিল হয়েছে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2023, 02:20 PM
Updated : 19 May 2023, 02:20 PM

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তিন মেয়র পদপ্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ আছে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেকের। অন্যদিকে বার্ষিক আয়ে এগিয়ে আছেন জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু। 

আয় ও সম্পদে দুজনের থেকে পিছিয়ে আছেন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মো. আব্দুল আউয়াল। 

প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিভিন্ন ব্যাংক, আয়কর বিভাগ, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছে। সবার তথ্য ঠিক আছে কিনা তা তারা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। 

হলফনামা থেকে জানা যায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সদ্যবিদায়ী মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রীর বছরে আয় ৫৯ লাখ টাকা এবং সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। 

জাতীয় পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুর রয়েছে আট কোটি ৪১ লাখ টাকার সম্পদ আর বছরে তার আয় ৯০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী মো. আব্দুল আউয়ালের বার্ষিক আয় তিন লাখ ৩১ হাজার টাকা। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণও অন্য দুজনের তুলনায় কম। 

হলফনামায় মেয়রপ্রার্থী তালুকদার খালেক নিজের নামে থাকা সম্পত্তির স্ত্রী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের নামে থাকা সম্পদেরও বিবরণ দিয়েছেন। 

তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, বছরে কৃষি খাত থেকে তার আয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, ব্যাংকের সুদ থেকে আয় ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা, মেয়র পারিতোষিক ও ভাতা থেকে আয় ২৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। 

প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় খাতে বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ থেকে আয় ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা, স্ত্রী উপমন্ত্রীর পারিতোষিক ও ভাতা থেকে আয় ২০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। 

হলফনামায় দেখা গেছে, খালেকের কাছে নগদ টাকা আছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ। চারটি ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ১৮ হাজার টাকা। ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর রয়েছে তার। 

দুটি গাড়ির মালিক তিনি। এর মধ্যে একটি গাড়ির দাম দেখিয়েছেন ৪৪ লাখ টাকা এবং মাইক্রোবাসের দাম দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। 

তার এসি, টিভি, ফ্রিজ ও ওভেনের মূল্য ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্রের মূল্য ৭ লাখ টাকা।

তালুকদার খালেকের স্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারের কাছে নগদ টাকা আছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। চারটি ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ৯৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ লাখ টাকার। 

টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ব্যবহার করেন তিনি। সেটির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ ছাড়া বৈবাহিক সূত্রে পাওয়া ২৫ ভরি স্বর্ণের মালিক তিনি। 

স্থাবর সম্পদের মধ্যে খালেক পৈতৃকসূত্রে ২৩ বিঘা কৃষিজমির মালিক। এ ছাড়া তার ৩ দশমিক ২১ একর কৃষিজমি ও ৩ কাঠা অকৃষি জমি আছে। যার মোট মূল্য ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেক মালিক তিনি, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। 

তার স্ত্রীর নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট রয়েছে, যার মূল্য উল্লেখ করেছেন ২২ লাখ টাকা। এ ছাড়া জমিসহ পাঁচতলা আরেকটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক তিনি, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ টাকা। 

অন্যদিকে খালেক ও স্ত্রীর নামে সোনালী ব্যাংক খুলনার স্যার ইকবাল রোড শাখায় ঋণ আছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। 

এর আগে ২০১৮ সালের হলফনামায় তালুকদার খালেক কৃষি, মৎস্য ঘের, ব্যাংকের সুদ ও সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক ভাতা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছিলেন ৪১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া ও ব্যাংকের সুদ থেকে তার স্ত্রীর বছরে আয় ছিল ১১ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তিনি তার মোট সম্পদের মূল্য দেখিয়েছিলেন ৯ কোটি ৭ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর সম্পদ ছিল ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। 

খালেক বলেন, “আমি সংসদ সদস্য, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ও দুই বার মেয়র ছিলাম। আমার যে আয় ও সম্পদ আছে, এর সব তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেছি।” 

এ দিকে জাতীয় পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু তার হলফনামায় জানিয়েছেন, ৮ কোটি ৪১ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে তার। বছরে বাড়ি ভাড়া থেকে ১ লাখ ৮৬ হাজার ও ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে ৮৮ লাখ টাকা আয় তার। 

তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ও ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড খুলনা শাখায় ৩ কোটি টাকার এফডিআর। 

শফিকুল ইসলাম মধুর একটি গাড়ির মূল্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা, ১৪ ভরি স্বর্ণ, ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, দেড় লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র এবং স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা আছে। 

স্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ৪ কাঠা জমি ও চারতলা বাড়ি, টুটপাড়া মৌজায় ০.১৩৭২ ও ০.১২৪৪ একরের দুটি জমি; যার সর্বমোট মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। 

একইসঙ্গে ব্যাংক ঋণেও শীর্ষে রয়েছেন মধু। মধুমতি ব্যাংক খুলনা শাখায় তার ঋণের পরিমাণ ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

মধু জানান, “আমি হলফনামায় কোনো তথ্য গোপন করিনি। আয়কর রিটার্নেও সবকিছু উল্লেখ রয়েছে।” 

অপর মেয়র প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের মো. আব্দুল আউয়ালের বার্ষিক আয় ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার ও মাদ্রাসার শিক্ষকতা থেকে ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। 

তার অস্থাবর সম্পদ আছে নগদ ৬ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর মূল্য ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ১৫ ভরি স্বর্ণ, যার মূল্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। 

স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে শুধু নিজের নামে ৩ দশমিক ৫৭ শতক অকৃষি জমি। 

আউয়াল বলেন, “আমার আয় ও সম্পদ অন্য প্রার্থীদের তুলনায় কম।” 

এর আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানিয়েছিলেন, খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক, জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবদুল আউয়াল, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন, স্বতন্ত্র এস এম শফিকুর রহমান, আল আমিন মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরী ও সৈয়দ কামরুল ইসলাম– এই সাতজন। 

যাছাই-বাছাইয়ে তাদের মধ্যে মনোনয়নপত্রে তথ্যের ঘাটতি ও ভুল তথ্য থাকায় জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন, স্বতন্ত্র এস এম শফিকুর রহমান, মো. আবদুল্লাহ চৌধুরী ও সৈয়দ কামরুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। 

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১২ জুন ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে ভোট গ্রহণ। এর আগে ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে প্রচার-প্রচারণা।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার প্রায় পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার। ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রে কক্ষ থাকবে এক হাজার ৭৩২টি। 

আরও পড়ুন

Also Read: খুলনা সিটি নির্বাচন: ১৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল

Also Read: নির্বাচনে অংশ নিতে পদত্যাগ খুলনার মেয়র খালেকের

Also Read: খুলনায় নির্বাচনী আচরণবিধি মানতে দুই প্রতিমন্ত্রীকে ইসির চিঠি