হামলার আগে শিয়ালকোল বাজারে একদল মাদরাসা ছাত্র মাইকে মাজার ভাঙচুরের ঘোষণা দেন বলে দাবি খাদেমদের।
Published : 10 Sep 2024, 07:42 PM
মাইকে শত শত লোক জড়ো করে এবার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একটি মাজারে হামলা-ভাঙচুর চালানোর পর তিনটি কবর খুঁড়ে সেখান থেকে হাড়গোড়-মাথার খুলিও নিয়ে গেছে একদল সশস্ত্র লোক।
সোমবার উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে ‘হযরত বড়পীর গাউসুল আজম দরবার শরীফে’ এ ঘটনা ঘটে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান।
এর আগে ২৯ অগাস্ট কাজিপুর উপজেলার মনসুর নগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের পাশে ‘আলী পাগলার মাজার’ এবং ৩ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর গ্রামের ‘ইসমাইল পাগলার মাজার’ ভাঙচুর করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে শ্যামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাজারের তিনটি কবর খুঁড়ে ভেতরে থাকা হাড়-গোড়, মাথার খুলি ও চুল নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। দুটি খানকা ও একটি রান্নাঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।
আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে মাজারের জরুরি কাগজপত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জাম। এমনকি মাজারের দানবাক্স ও ট্যাংক ভেঙে টাকা লুটপাট করা হয়েছে।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে শিয়ালকোল বাজারে একদল মাদরাসা ছাত্র জমায়েত হয়ে মাইকে মাজার ভাঙচুরের ঘোষণা দেন বলে দাবি করেছেন মাজারের খাদেম শিলন্দা গ্রামের হাফিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “সকালে ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তারা মিছিল নিয়ে মাজারে তাণ্ডব চালায়। হামলাকারীরা শাবল, হ্যামার, দুরমুজ, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে মাজারের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করেন। তিনটি পাকা কবর ভেঙে ভেতরে থাকা দেহাবশেষ বস্তায় ভরে নিয়ে যায় তারা।
“এ সময় চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা মাজারে আগত লোকজনকে ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে নিষেধ করেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানানো হলেও এ পর্যন্ত কেউ আসেননি।”
তবে ওসি থানায় গিয়ে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান মাজারের এই খাদেম।
মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিয়ালকোল ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সিলন্দা গ্রামের হযরত আলী বলেন, ২০ বছর ধরে এখানে মাজারের কার্যক্রম চললেও কেউ কোনোদিন বাধা দেয়নি। অথচ এখন প্রকাশ্যে ‘তৌহিদি জনতার’ নাম ভাঙ্গিয়ে মাজারে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হচ্ছে।
“এটা কেমন স্বাধীন দেশ, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, এমন স্বাধীনতা তো আমরা চাইনি। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।”
মাজারের জমিদাতা শাহ সুফি ফকির শহিদ শাহের বৃদ্ধা মা ওমিছা বেগম বলেন, মানুষের সঙ্গে মানুষের শক্রতা থাকতে পারে। কিন্তু মৃতদেহের সঙ্গে শক্রতা থাকার কথা না।
অথচ হামলাকারীরা মাজারে হামলা চালিয়ে তার ছেলের কবর খুঁড়ে দেহাবশেষ নিয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।
২০০৫ সালে হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রা.) দরবার শরিফের নামে বহুলী ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামের শাহ সুফি ফকির শহিদ শাহ ১৫ শতক এবং শিয়ালকোল ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের খাজা সফুরা পাগলী পাঁচ শতক জমি ওয়াকফ্ করে দেন বলে জানান মাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব কালু।
তিনি বলেন, এরপর থেকে সেখানে দরবার শরিফের কার্যক্রম চলতে থাকে। ২০০৭ সালে রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা তরিকায়ে কাদরিয়ার অনুসারী দরবেশ আলতাফ শাহ, ২০১৪ সালে শাহ সুফি ফকির শহিদ শাহ এবং ২০১৬ সালে সফুরা পাগলী মারা গেলে দরবার শরীফেই তাদের আলাদা কবর দেওয়া হয়।
প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার এবং প্রত্যেক মাসের পূর্ণিমার রাতে দরবার শরিফে জিকির, মিলাদ মাহফিল ও মুর্শিদী গানের আয়োজন শেষে তবারক বিতরণ করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর বাৎসরিক অনুষ্ঠান হয়। বড় বড় শিল্পীরা গান-বাজনা করতে আসেন সেখানে। হাজার হাজার ভক্তের আগমন ঘটে।
এতদিন এসব কাজের কেউ বিরোধিতা করেনি; কিন্তু এখন মাজারগুলোতে হামলা চালানোর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আব্দুল ওয়াহাব।
এ বিষয়ে ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, “মাজার ভাঙচুরের কথা শুনেছি। উনারা (খাদেম) থানায় এসেছিলেন, লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরও পড়ুন: