গত বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের কাজিপাড়া উপজেলায় মাজারটি ভেঙে দেওয়া হয়। এই ভিডিও ভাইরাল হলে তুমুল আলোচনা তৈরি হয়েছে।
Published : 31 Aug 2024, 09:10 PM
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যে মাজার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে হামলাকারীরা স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামের নেতৃত্বে হানা দিয়েছিল বলে তথ্য মিলেছে। সেই ইমামকে চাকরিচ্যুত করেছে স্থানীয় গ্রামবাসী।
তবে এই ঘটনায় পুলিশে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি বলে তারা কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি।
সরকার পতনের পর বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানায় হামলার মধ্যে সিরাজগঞ্জের এই মাজার ভাঙচুরের ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে কাজিপুর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নে বামনজানি বাজারের পাশে আলী পাগলার মাজারটি ভাঙচুর করা হয়। সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে।
পরে তথ্য মেলে শালগ্রাম তমিজ উদ্দীনের বাড়ি জামে মসজিদের পেশ ইমাম গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে এই হামলা হয়।
হামলাকারীরা হাতুরি, কোদাল, শাবল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে মাজারের সব স্থাপনা ভেঙে দেয়। কবরে উঠে পা দিয়ে আঘাত করা হয়।
প্রতিবাদে পরদিন শালগ্রাম বাজারে বিক্ষোভ করে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। পরদিন তারা মসজিদের পেশ ইমাম গোলাম রব্বানীকে চাকরিচ্যুত করে।
স্থানীয়রা জানায়, দিনাজপুর থেকে কাজিপুরের কুমারিয়াবাড়ী গ্রামে যাওয়া আলী খাজা আলী পাগল একজন আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন। মৃত্যুর আগে ১০ বছর তিনি মসজিদে ইমামতিও করেন।
২০০৪ সালের গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি মারা গেলে তার ভক্তরা একটি মাজার নির্মাণ করে। তার প্রয়াণ দিবসে সপ্তাহব্যাপী ওরশ মাহফিল হয় সেখানে। এতে সারাদেশের কয়েক হাজার ভক্ত অংশ নিয়ে থাকে।
স্থানীয় কৃষক মো: শরিফ বলেন, “সব সময় তিনি (আলী খাজা আলী) ঘরবন্দি থাকতে পছন্দ করতেন। বাইরে বের হলে কোনো সময় আকাশের দিকে তাকাতেন না। সবসময় আল্লাহু জিকিরে মগ্ন থাকতেন। ৭/৮ বছর আগে তিনি মারা গেলে গ্রামবাসীরা তাকে ওইখানে করব দেন।
“এরপর সেখানে মাজার তৈরি করে আল্লাহুর জিকির ও এবাদত বন্দেগি করত। এতদিন কেউ এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু হঠাৎ ওই ইমাম লোকজন নিয়ে মাজারের ঘর ও আসবাবপত্র ভেঙে ফেলেছে। এ কারণে গ্রামবাসীও ইমামের ওপরে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করেছে।”
শালগ্রামের মাতুব্বর আজগর আলী বলেন, “একজন মুসলমান হয়ে আরেকজন মুসলমানের কবর কীভাবে পা দিয়ে আঘাত করে অসম্মান করতে পারে?”
আরেক মাতুব্বর আব্দুর রহমান বলেন, “গোলাম রব্বানী একজন মসজিদের ইমাম হয়েও দলবল নিয়ে মাজার ভেঙেছেন। এমন ইমামের পেছনে আমরা আর নামাজ পড়ব না। এ কারণে শনিবার ফজরের নামাজ পড়াতে আসলে ইমাম গোলাম রব্বানীকে চাকরিচ্যুত করা হয়।”
জানতে চাইলে কাজিপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, “মাজার ভাঙচুরের কথা শুনেছি। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ বিষয়ে ইমাম গোলাম রব্বানীর কোনো বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।