ফেরত আনাদের মধ্যে ১৪ রোহিঙ্গা নাগরিকও আছেন। তারা টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাস করতেন।
Published : 27 Feb 2025, 10:02 PM
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী থেকে বিভিন্ন সময়ে ধরে নিয়ে যাওয়া ২৯ জেলেকে আরাকান আর্মির কাছ থেকে ফেরত এনেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়া সংলগ্ন একদিনের ট্রানজিট জেটি ঘাট দিয়ে এসব জেলেদের ফেরত আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান।
ফেরত আনা এই জেলেদের বিস্তারিত নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তবে তাদের মধ্যে ১৪ রোহিঙ্গা নাগরিকও আছেন। তারা টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাস করতেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর বলেন, মিয়ানমারের চলমান সংঘাতের জেরে দেশটির রাখাইন রাজ্যে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আর বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকা এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে।
এতে সংলগ্ন নাফ নদীতেও বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির তৎপরতা থাকায় মাছ ধরার সময় বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এসব জেলেদের আরাকান আর্মির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে হেফাজতে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, “নাফ নদী থেকে বিভিন্ন সময়ে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেরত আনতে বিজিবি আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করে তৎপরতা শুরু করে। পরে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ২৯ জেলেকে ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে বিজিবি।”
এর আগে বিকালে মিয়ানমারে জিম্মি থাকা জেলেদের ফেরত আনার জন্য দুইটি কাঠের ট্রলারসহ বিজিবির একটি দল মংডু টাউন শিফের উদ্দ্যেশে রওনা দিয়েছিল।
বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, “ফেরত আনা জেলেদের নানা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরে এসব তাদের টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পুলিশ স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেবে।”
মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউন দখল করে নেয় সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
এরপর আরাকান আর্মি সদস্যরা নাফ নদীতে তাদের জলসীমানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এর মধ্যে ২২ ফেব্রুয়ারি নাফ নদীর টেকনাফ জেটি ঘাট এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে চারটি ট্রলারসহ ১৯ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি নাফ নদীর মোহনা সংলগ্ন এলাকা থেকে দুটি ট্রলারসহ চার জেলেকে এবং গত বছর ১৬ নভেম্বর নদীর উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্ত থেকে ছয় জেলেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির সদস্যরা।
সব শেষ ১৫ অক্টোবর আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা বাংলাদেশি ১৬ জেলেকে ফেরত এনেছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এছাড়া মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে টেকনাফের ব্যবসায়ীদের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেওয়া তিনটি জাহাজ গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে নাফ নদীর মোহনার নাক্ষ্যংকদিয়া এলাকায় পৌঁছালে তল্লাশির নামে আটকে দেয় আরাকান আর্মি।
পরে বেশ কিছুদিন আটকে রাখার পর সেগুলো মুক্তি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন সময় নাফ নদী থেকে আরাকান আর্মি ধরে নেওয়ার জেলেদের সন্ধ্যায় বিজিবির মাধ্যমে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
এরমধ্যে ১৫ জন বাংলাদেশি জেলে ছাড়াও উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাসরত ১৪ রোহিঙ্গা জেলেও রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পুরোনো খবর
এবার চার নৌকাসহ ১৯ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
নাফ নদী থেকে ২০ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে 'আরাকান আর্মি'
আরাকান আর্মি কেন বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যায়?
টেকনাফে ৫ জেলেকে 'অপহরণ' আরাকান আর্মির
অবশেষে মুক্তি পেল আরাকান আর্মির আটক করা জাহাজ
মিয়ানমার থেকে পণ্য আসছে না টেকনাফে, আমদানি বন্ধের 'উড়ো খবর'