এ সময় ‘নিজেদের রক্ষা করতে’ তারা ফেনী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন।
Published : 24 Dec 2024, 10:03 PM
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ওরফে কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিতের ঘটনায় মামলার জন্য প্রস্তুত করা এজাহারের কপি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ‘নিজেদের রক্ষা করতে’ তারা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে ফেনী জেলা আদালতের ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লব অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিআইও ওয়ান) পরিদর্শক মোহাম্মদ রশিদ বলেন, “বিকালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু ও তার ছেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এসে তাদের ওপর হামলা হয়েছে বলে নিরাপত্তা চেয়েছেন।
“আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ফেনী মডেল থানা পুলিশকে কল করে তাদের নিরাপত্তা দিয়ে নিরাপদ গন্তব্যে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
রোববার আবদুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাকে সারা গ্রাম ঘুরিয়ে লাঞ্ছিত করে একদল লোক। তারা ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। সন্ধ্যার পর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়।
এক মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি জুতার মালা পরা অবস্থায় কানুকে টানাহেঁচড়া করছেন। এ সময় কানু বারবার তাকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছিলেন।
কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল হাই কানু সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি। তিনি ঘটনাস্থলের পাশের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা।
এ ঘটনার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কানুর পরিবার স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের দায়ী করলেও দলটি নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে। অবশ্য সোমবার দলটি তাদের দুই সমর্থককে বহিষ্কার করার কথা জানায়।
মঙ্গলবার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার ভিডিও দেখে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
দুপুরে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এ টি এম আক্তার উজ জামান আটকের খবর দেওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে; তিনি আজকের মধ্যেই মামলা করবেন।
এর মধ্যেই মামলার এজাহারের কপি ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব বলেন, “ফেনী আদালতের একজন আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার এজাহার তৈরি করেছিলাম। এজাহারে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়।
“বিকালে বাবাকে আদালতে নিয়ে আসি এজাহারের কপিতে স্বাক্ষর করানোর জন্য। বিকাল ৪টার দিকে আদালতের গেট থেকে বের হওয়া মাত্রই ২০-৩০ জন লোক আমাদের ঘিরে ফেলে। এরপর জোর করে এজাহারের কপি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “এ ঘটনার পর বাবাকে নিয়ে ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রবেশ করে নিজেদের রক্ষা করি। পুলিশের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, সরাসরি যেতে সমস্যা হলে এজাহারের কপি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে। আমরা মামলা দায়ের করব।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বলেন, “আমরা কি এমন দিন দেখার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম? আজকে মামলার এজাহার নিয়ে ফেনী আদালত থেকে বের হতেই তারা এজাহারের কপি ছিনিয়ে নেয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি যারা এ ঘটনা করেছে- তারা সবাই ফেনীর জামায়াত-শিবিরের লোক। আমার শরীর ভালো না। এই বয়সে এত লাঞ্ছনা সহ্য হয় না।”
ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, “ফেনী আদালত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু হামলা বা লাঞ্ছনার বিষয়টি সঠিক নয়। তিনি আদালত এলাকায় অনিরাপত্তা বোধ করায় পুলিশের আশ্রয় নিয়েছেন। পরে থানা পুলিশের একটি দল তাকে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে।”
এ প্রসঙ্গে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এ টি এম আক্তার উজ জামান বলেন, “আমরা ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য আজকে গাড়িও পাঠিয়েছিলাম। বলেছি, নিরাপত্তা দিয়ে তাকে নিয়ে আসব। এরপরও মামলাটা হোক। কিন্তু তিনি তখন আসেননি।
“এরপর বলেছি, আসতে সমস্যা হলে হোয়াটসঅ্যাপে এজাহারের কপি পাঠাতে। আর ফেনীর আদালত গেইটে কী হয়েছে- সেটা আমি বলতে পারব না।”
আরও পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনা: ভিডিও দেখে পাঁচজন আটক, মামলা হয়নি
মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনা: ২ সমর্থককে বহিষ্কার করল জামায়াত
মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা: জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে চৌদ্দগ্রামে বিএনপির বিক্ষোভ
কুমিল্লার সেই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার 'আতঙ্কে' এলাকাছাড়া, গ্রেপ্তার নেই
মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত: জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে চৌদ্দগ্রামে মানববন্ধন