ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল থেকে সিলেটে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
Published : 09 Apr 2025, 02:58 PM
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল থেকে নগরের কয়েকটি স্থানে দোকান ও রেস্তোরাঁয় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর মধ্যে নগরের মিরবক্সটুলায় রয়াল মার্ক হোটেল ভাঙতে হামলাকারীরা শাবল, হাতুড়ি ও গুলতি ব্যবহার করেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক।
ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার সকালে রয়াল মার্ক হোটেলের ব্যবস্থাপক আবদুল মতিন সরকার কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ৪০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন বলে জানান সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জিয়াউল হক।
এ মামলায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
কারাগারে যাওয়ারা হলেন- সিলেট নগরের শিবগঞ্জ সাদিপুর এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে মামুনুল হক, কাজীটুলা এলাকার মো. রাজা মিয়ার ছেলে মো. রাজন (১৯), আরব আলীর ছেলে ইমন (১৯), দ্বীন ইসলামের ছেলে মো. রাকিব (১৯), সাদ আহমদের ছেলে মিজান আহমদ (৩০), সওদাগরটুলা এলাকার প্রয়াত আবুল বাশার মিয়ার ছেলে মো. আব্দুল মোতালেব (৩৫), গোয়াইটুলা এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে সাব্বির আহমদ (১৯), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ফরিদ মিয়ার ছেলে জুনাইদ আহমদ (১৯), মিরের ময়দানের প্রয়াত মোস্তফা মিয়ার ছেলে মো. রবিন মিয়া (২০), শাহী ঈদগাহ এলাকার মো. মহছন আহমদের ছেলে মোস্তাকিন আহমদ তুহিন (১৯), দরগাহ গেইট এলাকার আব্দুল ছাত্তারের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন (৩০), শেখঘাট এলাকার শামীম আহমদের ছেলে মো. রিয়াদ (২৪), বালুচর নতুন বাজার এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে মো. তুহিন (২৪), বটেশ্বর বাজারের সেলিম রেজার ছেলে আল নাফিউ (১৯), নোয়াখালীর চাদমিল থানার পশ্চিম নাহার কিল গ্রামের সৈয়দ আলতাফ মানিকের ছেলে সৈয়দ আল আমিন তুষার (২৯), বিয়ানীবাজার উপজেলার গোবিন্দ্রশ্রী গ্রামের প্রয়াত ইউসুফ আলীর ছেলে মো. সোহেল খান (৪২), সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সিদ্দরপাশা গ্রামের শাহ নূর মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া রুপন (৩৫), বিশ্বনাথ উপজেলার জানাইয়া গ্রামের প্রয়াত নন্দন মালাকারের ছেলে অরুন মালাকার (৩৫)।
এর আগে সোমবার বেলা ৩টার দিকে ইসরায়েলি পণ্য রাখা ও বিক্রির অভিযোগে নগরের মিরবক্সটুলা অবস্থিত কেএফসি রেস্টুরেন্ট হামলা ও ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় তারা রেস্টুরেন্টের ভেতরে থাকা বিভিন্ন কোমল পানীয় রাস্তায় ফেলে নষ্ট করেন।
এ ছাড়া কেএফসি রেস্টুরেন্ট নিচ তলায় থাকা রয়াল মার্ক হোটেলেও ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরে চৌহাট্টা এলাকায় আলপাইন রেস্টেুরেন্টেও ভাঙচুর করা হয়।
একই সময় নগরের দরগাহ গেইট এলাকায় বাটা জুতার শোরুম ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। জিন্দাবাজার এলাকায় বাটার দুটি শোরুম ভাঙচুর-লুটপাট করে একটি শোরুমের মালামাল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বন্দরবাজার এলাকায় বাটার একটি শোরুম ভাঙচুর করা হয়।
একই সময় নগরের আম্বারখানা পয়েন্টে ইউনিমার্ট শপিং সেন্টারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দোকানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ভাঙচুরের শিকার রয়াল মার্ক হোটেলের ব্যবস্থাপক আবদুল মতিন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, “হামলাকারীরা প্রথম দফায় বেলা ১১টায় এবং দ্বিতীয় দফায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মব সৃষ্টির চেষ্টা করে। পরে তৃতীয় দফায় দুপুর আড়াইটার দিকে এক থেকে দেড় হাজার মানুষ এসে ভাঙচুর চালান।
“হামলা ও ভাঙচুরের পাশাপাশি তারা লুটপাটও চালান; যা বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে। ভাঙচুরে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জন অংশ নেন।”
তিনি বলেন, “হামলাকারীরা হোটেলের ভেতরে ঢুকে শাবল, হাতুড়ি দিয়ে ভেতরের ইন্টেরিয়র, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট করে।
“অন্যদিকে বাইরে থেকে গুলতি দিয়ে ঢিল ছুড়ে ১৪ তলা ভবনের ৬ তলা পর্যন্ত বাইরের কাচের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে হোটেলের ১৫ থেকে ২০ কর্মী আহত হন।”
সব মিলিয়ে হোটেলের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি রয়াল মার্ক হোটেলের ব্যবস্থাপকের।
ওসি জিয়াউল হক বলেন, “গ্রেপ্তারদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। ভিডিও ফুটেজ দেখে অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।”
ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় বিএনপি নেতার নিন্দা
হোটেল রয়েল মার্কসহ নগরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী। তিনি হোটেল রয়েল মার্কের ভাইস চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, “ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে আমাদেরও অবস্থান। ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও সক্রিয় রয়েছেন। কিন্তু মিছিলের নামে প্রকাশ্য দিবালোকে একটি অভিজাত হোটেলে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।
“ইসলাম শান্তির ধর্ম। কারো প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট ইসলাম সমর্থন করে না। কিন্তু সোমবার দেখলাম সিলেটের দীর্ঘদিনের সম্প্রীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হোটেলে কীভাবে হামলা চালানো হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের কোটি টাকার মত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
“শুধু তাই নয় দিনভর নগরের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় সিলেটবাসী হতবাক। এরসঙ্গে জড়িতরা কোনোভাবেই ‘তৌহিদী জনতা’ হতে পারে না। এরা দুর্বৃত্ত। এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
বিক্ষোভের নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের পথ চিরতরে বন্ধ করার দাবি জানান বিএনপির এই নেতা।
সোমবার দেশের অন্তত ছয় জেলায় ‘ইসরায়েলি পণ্য রাখা ও বিক্রি’ করার অভিযোগ তুলে ধরে ১৬টি রেস্তোরাঁ ও বিক্রয় কেন্দ্রে হামলা-ভাঙচুরের খবর আসে।
কক্সবাজারে পাঁচটি, চট্টগ্রামে তিনটি, সিলেট পাঁচটি, গাজীপুরে চারটি, কুমিল্লায় একটি এবং বগুড়ায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
গাজায় গণহত্যা: ছয় জেলায় বাটা-কেএফসিতে হামলা-ভাঙচুর
বাটা লুটের জুতা বিক্রি করতে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে ধরা
এরা সব 'ফাও পার্টি': ভাঙচুরকারীদের প্রসঙ্গে সিলেটের পুলিশ কমিশনার