আমদানির খবরেই পাবনায় পেঁয়াজের দরপতন

ভারতীয় নয়, দেশি পেঁয়াজই মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে; যা একদিন আগেই বিকিয়েছে ৯০ টাকায়।

সৈকত আফরোজ আসাদপাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2023, 03:05 PM
Updated : 6 June 2023, 03:05 PM

দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে হিলি, ভোমরা, বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

আর পেঁয়াজ আমদানির খবরেই পাবনার বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ নয়, দেশি পেঁয়াজই মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে; যা একদিন আগেই বিকিয়েছে ৯০ টাকায়। সে হিসাবে দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে গেল।

হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির কথা বলেন। কিন্তু ওই সময় কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষেকের স্বার্থ বিবেচনায় আমদানির অনুমতি দেয়নি। এর কয়েকদিন পর প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা হলে রোববার রাতে কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির ঘোষণা দেয়।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাবনায় এখনও এসে পৌঁছেনি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারতের পণ্যটি প্রবেশের খবর আসার পর পেঁয়াজ ভাণ্ডারখ্যাত জেলা পাবনায় কমেছে দাম।

আরও দাম কমে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

পাবনার বেশকিছু পেঁয়াজ হাট ঘুরে দেখা গেল, সোমবার থেকেই কমতে শুরু করেছে দাম। দরপতনের কারণে চাষিরাও হাটে পেঁয়াজ কম আনছেন। কেউ কেউ বিক্রি করতে এনেও ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

বড় পেঁয়াজের হাট হাজিরহাটে দেশি ভালো পেঁয়াজ প্রতি মণ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়; যার প্রতি কেজি দর দাঁড়ায় ৬০ থেকে সাড়ে ৬২ টাকা। অন্যদিকে এ পেঁয়াজ প্রতি মণ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা।

চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, দুই-তিনদিন আগেও পেঁয়াজের প্রতি মণের দাম ছিল ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা; অর্থাৎ প্রতি মণ পেঁয়াজে প্রায় ৭০০-৮০০ টাকা দাম কমেছে। এ দরপতনে ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি মিললেও লোকসানজনিত দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

সদর উপজেলার চর বলরামপুরের পেঁয়াজ চাষি আব্দুল হান্নান মন্ডল বলেন, “সকালে হাজির হাটে পেঁয়াজ এনেছিলাম। ভারতের পেঁয়াজ দেশে ঢোকার খবরে পেঁয়াজের দাম অনেক কম। দাম যদি আরও কমে তবে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

“অন্যদিকে পেঁয়াজ বেশিদিন ঘরে রাখার সুযোগও নেই, পচন ধরে নষ্ট হয়। দুদিক থেকেই আমরা বিপদগ্রস্ত। তাই আমাদের লোকসান যেন না হয় সেটি নিশ্চিতে সরকার যদি দাম নির্দিষ্ট করে দেয় তাহলে সবার জন্যই ভালো হবে।”

গয়েশপুর এলাকার চাষি করিম উদ্দিন জানান, সার, বীজ, চাষের খরচ, শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ চাষ করে তেমন লাভবান হতে পারছেন না তারা। মৌসুমের সময় দুই হাজার টাকা করে মণ পাওয়া গেলে কিছুটা লাভবান হতেন চাষি।

এই চাষিও দাম বেঁধে দেওয়ার কথা বলেন। পাশাপাশি চাষের উপকরণের দাম কামানোরও দাবি জানান তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি চাকরিজীবী আরমান মালিথার সঙ্গে কথা হয় পাবনার হাজির হাটে।

তিনি বলেন, দাম বেশি হওয়ায় গত কয়েকদিন পেঁয়াজ কম করে কিনছিলেন। কয়েকদিন পর আরো দাম কমবে বলে প্রত্যাশা করছেন।

খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আতাহার বলেন, “আমরা যেমন কিনি তেমন বিক্রি করি। তবে দাম যদি নির্ধারিত হতো তবে কেনা ও বেচা উভয়ই সহজ হতো। যদি বাজার নিয়ন্ত্রণ না হয় তবে আমদানিকৃত পেঁয়াজ শেষ হলে দাম আবার কয়েকগুণ বাড়বে। সেই দাম ক্রেতাদের জন্য আবার চাপ সৃষ্টি করবে।”

পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল যেন না হয় সে বিষয়ে মনিটরিং শুরু করেছে পাবনা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

হাট-বাজারের দোকানগুলোয় নিয়মিত মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশনাসহ কোনো কারসাজিতে না জড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান রনি।

আরও পড়ুন

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু
বেনাপোল বন্দরে এসেছে তিন ট্রাক পেঁয়াজ
আমদানির খবরেই যশোরে ১০০ টাকার পেঁয়াজ হল ৯০ টাকা
সোনামসজিদ স্থলবন্দরে এসেছে ভারতীয় পেঁয়াজ
হিলি বন্দর দিয়ে এলো তিন ট্রাক পেঁয়াজ