কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের নয় বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পর থেকে সারাদেশের সঙ্গে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। যার কারণে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো আশপাশের বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে স্টেশনে অন্তত ১০টি ট্রেন আটকে থাকায় কয়েক হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগ ও কষ্ট পোহাচ্ছেন। রোজার মধ্যে যাত্রীদের এই দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
রোববার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে নাঙ্গলকোটের হাসানপুর স্টেশন সংলগ্ন ঢালুয়া ইউনিয়নের তেজের বাজার এলাকায় বিজয় এক্সপ্রেসের নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
লাইনচ্যুত হওয়ার পর বগিগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের উভয় লাইনে ছড়িয়ে-ছটিয়ে পড়ে। ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পথের ট্রেনগুলো বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে।
সন্ধ্যায় আখাউড়া থেকে একটি এবং চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন এসে উদ্ধার কাজ শুরু করলেও রাত ১২টা পর্যন্ত দুই লাইনের একটিতেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে পারেনি রেলওয়ে বিভাগ।
রাতে নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাহাবুব আলম সোহাগ বলেন, “রেলওয়ের কর্মকর্তারা চেষ্টা করছেন চট্টগ্রামগামী লাইন (ডাউন লাইন) দিয়ে দুইদিকের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য। তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ডাউন লাইন চালু হতে সোমবার ভোর হয়ে যাবে। কারণ ওই লাইনটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
কুমিল্লা স্টেশন মাস্টার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, কুমিল্লা স্টেশনে আটকে পড়েছে ঢাকা থেকে আসা চট্টলা এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা নাছিরাবাদ এক্সপ্রেস, লাকসামে আছে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সুবর্ণা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস।
“লালমাই এলাকায় আছে ঢাকা থেকে আসা কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, লাকসামে আছে চাঁদপুর থেকে আসা সাগরিকা এক্সপ্রেস। এ ছাড়া চট্টগ্রাম অভিমুখে যাওয়া আরও কয়েকটি ট্রেন ও মালবাহী ট্রেন আটকে পড়েছে বিভিন্ন স্টেশনে।”
ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামগামী নাছিরাবাদ এক্সপ্রেসের যাত্রী মোহাম্মদ আকাশ বলেন, “ময়মনসিংহ থেকে সকালে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য ট্রেনে উঠি। বিকাল ৪টার দিকে ট্রেনটি কুমিল্লা সদর উপজেলার রসুলপুর স্টেশনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। সাড়ে সাত ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা স্টেশনে এনে ট্রেন ফেলে রাখা হয়েছে। কখন যাব চট্টগ্রাম জানি না। মনে হচ্ছে, কালকে সকালের আগে ট্রেন চালু হবে না।”
একই কথা বলেন কসবা থেকে উঠা যাত্রী বাছির মিয়া। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম যাব। সব সময় ট্রেনে আসা-যাওয়া করি। জীবনে এমন দুর্ভোগে পড়িনি।”
বিকাল সাড়ে ৫টায় কুমিল্লা স্টেশনে আসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ট্রেনটি একই স্থানে দাঁড়িয়ে ছিল। এতে ‘চট্টলা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
মো. এমরান হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, “আমি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি ঢাকায়। ঢাকা থেকে কোম্পানির কাজে চট্টগ্রাম যাচ্ছি। কখন যে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে পারব জানি না। রেলে এমন দুর্ভোগে আর পড়িনি। রোজার মধ্যে মানুষ চরম কষ্ট পাচ্ছে।”
আবুল কালাম নামে চট্টলা এক্সপ্রেসের আরেক যাত্রী বলেন, “কুমিল্লা স্টেশনে পড়ে আছি ছয় ঘণ্টার উপরে। এখানেই ইফতার করেছি। হয়তো সেহরিটাও এখানেই করতে হবে যা পরিস্থিতি দেখছি।
“কর্তৃপক্ষ যদি দুর্ঘটনায় পতিত ট্রেনটি দ্রুত উদ্ধার করে তবে আমরা চট্টগ্রাম যেতে পারব। কতক্ষণ এভাবে বসে থাকে যায়! দুর্ঘটনার পর ছয় ঘণ্টা বিলম্বে উদ্ধার কাজ শুরু হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।”
রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা স্টেশনে অবস্থান করা চট্টলা এক্সপ্রেসের যাত্রী বিল্লাল হোসেন বলেন, “ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। আমার সঙ্গের অনেক যাত্রী এরই মধ্যে ট্রেন ছেড়ে অন্য পথে চলে গেছেন। অপেক্ষায় আছি, কখন সময় ট্রেন ছাড়বে। অনেক রাত হয়ে গেছে, ট্রেনে থাকা ছাড়া উপায় নেই।”