পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে তীর্থযাত্রীদের নৌকা ডুবির ঘটনায় দুদিনে মোট ৫১ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
এ ছাড়া সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় নিখোঁজের তালিকায় ছিলেন আরও অন্তত ২৫ জন।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপঙ্কর রায় সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান দীপঙ্কর আরও জানান, সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে আবার অভিযান শুরু হবে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হতাহতদের তথ্য জানানোর জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সেখানে নিহতদের নামের পাশাপাশি নিখোঁজের নামও স্বজনদের কাছ থেকে রাখা হচ্ছে।
সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন নিহত ৫০ জনের একটি নামের তালিকা সাংবাদিকদের কাছে দেন। এর মধ্যে নারী ২৫ জন, শিশু ১৩ জন ও পুরুষ ১২ জন। নিহতদের মধ্যে বোদা উপজেলার ২৯ জন, দেবীগঞ্জের: ১৮ জন, আটোয়ারীর একজন, সদরের একজন এবং ঠাকুরগাঁও সদরের একজন।
এরপর আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সবার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে প্রশাসন এরই মধ্যে সব মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে বলেও জানান তদন্ত কমিটি প্রধান।
রোববার মহালয়া উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় করে বোদা উপজেলার বরদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন উৎসবে যোগ দিতে। দুপুরের দিকে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় একটি নৌকা উল্টে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে ফিরতে পারলেও অনেকে নিখোঁজ থাকেন। নৌকাডুবির পরপরই স্থানীয়রা নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নামেন তল্লাশিতে।
রোববার ২৫ জনের লাশ উদ্ধারের পর রাতে নদীতে তল্লাশি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় নতুন করে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। রাজশাহী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা ডুবুরি দলও এখন অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।
সকালে করতোয়া এবং পাশের দিনাজপুরের আত্রাই নদীর বিভিন্ন স্থানে মরদেহ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। দিনাজপুর থেকে সাতটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা করতোয়া নদী উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় এমনিতে খুব খরস্রোতা নয়; গভীরতাও খুব বেশি নয়। কিন্তু গত দুদিনের টানা বর্ষণের পর উজানের ঢলে নদীতে পানি বেড়েছে অনেকটা।
এর মধ্যে দুর্ঘটনায় পড়া নৌকায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ওঠায় এবং মাঝ নদীতে নৌকাডুবির কারণে মৃত্যু এত বেশি হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
আরও পড়ুন: