পঞ্চগড়ে তীর্থযাত্রার নৌকা ডুবে মৃত্যু বেড়ে ৪৭

সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় নতুন করে উদ্ধার অভিযান শুরু হচ্ছে; রাজশাহী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা ডুবুরি দল তল্লাশিতে অংশ নিচ্ছেন।

পঞ্চগড় প্রতিনিধিঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2022, 09:06 AM
Updated : 26 Sept 2022, 09:06 AM

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে তীর্থযাত্রীদের নৌকা ডুবির ঘটনায় আরও ২২ জনের লাশ উদ্ধারের পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ জনে।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপঙ্কর রায় সোমবার বিকাল ৫টার দিকে মোট ৪৩ জনের লাশ উদ্ধারের তথ্য দিয়েছিলেন।

এ ছাড়া আরও ৪১ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান দীপঙ্কর জানিয়েছিলেন।

এরপর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘাটে থাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একজন  প্রতিনিধি, করতোয়া নদী থেকে আরও চারটি লাশ উদ্ধার হতে দেখেন। এর মধ্যে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের এবং দুজন শিশু। স্থানীয়দের সহায়তার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একে একে লাশগুলো নদীর পাড়ে নিয়ে আসেন।

এ নিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭ জনে আর নিখোঁজের সংখ্যায় দাঁড়ায় ৩৭ জনে।  

রোববার মহালয়া উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় করে বোদা উপজেলার বরদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন উৎসবে যোগ দিতে। দুপুরের দিকে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় একটি নৌকা উল্টে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে ফিরতে পারলেও অনেকে নিখোঁজ থাকেন। নৌকাডুবির পরপরই স্থানীয়রা নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নামেন তল্লাশিতে।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মাহবুব ইসলাম জানান, রোববার ২৫ জনের লাশ উদ্ধারের পর রাতে নদীতে তল্লাশি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল, সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় নতুন করে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। রাজশাহী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা ডুবুরি দলও এখন অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।

সকালে করতোয়া এবং পাশের দিনাজপুরের আত্রাই নদীর বিভিন্ন স্থানে মরদেহ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। 

নিহতদের স্বজনরা করতোয়া নদীর পাড়ে প্রিয়জনের লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরেও লাশ না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।       

বোদা থানার ওসি সুজয় কুমার রায় দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে, স্রোতের টানে হয়তো অনেক লাশ আশপাশের নদীতে ভেসে গেছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে। বোদা উপজেলার পাশেই দেবীগঞ্জ উপজেলা; তার পরেই দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা। আজ সেখান থেকে সাতটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।”

পুলিশ নিখোঁজদের উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে বলেও জানান ওসি। 

হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা করতোয়া নদী উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় এমনিতে খুব খরস্রোতা নয়; গভীরতাও খুব বেশি নয়। কিন্তু গত দুদিনের টানা বর্ষণের পর উজানের ঢলে নদীতে পানি বেড়েছে অনেকটা।

এর মধ্যে দুর্ঘটনায় পড়া নৌকায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ওঠায় এবং মাঝ নদীতে নৌকাডুবির কারণে মৃত্যু এত বেশি হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

নৌকা ডুবির ঘটনার সময় মাড়েয়া ঘাটের পাড়েই ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আজম আলী। তিনি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া নৌকাটি ডুবে যেতে দেখেছেন। 

তিনি বলেন, “এই ঘাটে অনেক লোকজন পারাপার হয়। পূজা উপলক্ষে এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচুর লোকজন পার হচ্ছে। এর মধ্যে আজকে হঠাৎ নৌকা ডুবে গিয়ে অনেক লোকজন মারা গেছে। আমি ১৬-১৭টা লাশ উঠতে দেখছি।”

নিহতদের মধ্যে উপজেলার রয়েছেন মাড়েয়া গ্রামের হেমন্তের মেয়ে পলি রানী (১৪), নির্মল চন্দ্রের স্ত্রী শোভা রানী, শালডাঙ্গা খালপাড়ের কার্তিকের স্ত্রী লজ্জা রানী (২৫), দেবীগঞ্জের শালডাঙ্গা হাতিডোবা গ্রামের বাবুল চন্দ্র রায়ের ছেলে দিপংকর (৩), পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের কালীকান্তর ছেলে অমল চন্দ্র (৩৫),  বোদার মাড়েয়া বামনপাড়ার সজিবের আড়াই বছর বয়সী ছেলে পিয়ন্ত, মহানন্দর স্ত্রী খুকি রানী (৩৫), দেবীগঞ্জের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের চণ্ডী প্রসাদের স্ত্রী প্রমিলা রানী (৫৫), দেবীগঞ্জের হাতিডোবার শিকারপুর গ্রামের রবিনের স্ত্রী তারা রানী (২৪), পাঁচপীর বংশীধর পূজারী গ্রামের প্রয়াত ভুড়া মহনের স্ত্রী শোনেকা রানী (৬০), বোদার মাড়েয়া শিকারপুর প্রধান পাড়া গ্রামের শ্রী মণ্টুর স্ত্রী কাঞ্জুনি রানী (৫৫), পাঁচপীর জয়নন্দ্র বজয়া গ্রামের মহানন্দ মাস্টারের মা প্রমীলা (৭০), দেবীগঞ্জ তেলিপাড়া গ্রামের প্রয়াত কলিন্দ্রনাথের স্ত্রী ধনো বালা (৪৭), পাচঁপীর বংশীধর গ্রামের রথেশ চন্দ্রের স্ত্রী সুমিত্রা রানী (৫৭), ময়দানদিঘীর চকপাড়া গ্রামের বিলাস চন্দ্রের স্ত্রী সফলতা রানী (৪০), বোদা উপজেলার মাড়েয়া বাসনহাট গ্রামের রমেশের স্ত্রী শিমলা রানী (৩৫), বোদা উপজেলার বড়শশী কুমারপাড়া গ্রামের হাচান আলী (৫২), একই উপজেলার আলোকপাড়া গ্রামের রমেশের শিশু কন্যা উশোশী, দেবীগঞ্জের হাতিডোবার নারায়নের শিশু কন্যা তনুশী, পাঁচপীর মদনহার গ্রামের রতন চন্দ্রের শিশু কন্যা শ্রেয়শী।

আরও পড়ুন: