নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি ৫৫ হাত পানির নিচ থেকে টেনে তুলেছে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়।
Published : 21 Mar 2022, 07:38 AM
সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে লঞ্চটি টেনে তুলে বন্দর থানার কাশিপুর খালের উত্তর পাড়ে আলামিননগর এলাকায় রাখা হয় বলে বিআইডব্লিউটিএ এর উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান।
লঞ্চের ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে নতুন করে কোনো লাশ মেলেনি জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, “এখনো চারজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনরা নাম লিখিয়েছেন। লঞ্চ উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত হলেও নদীতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।”
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আরেফিন বলেন, “লঞ্চ উদ্ধারের পর ভেতরে তল্লাশি চালানো হয়েছে, কোনো লাশ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, স্রোতের কারণে লাশ চলে যেতে পারে। মরদেহের খোঁজে নদীতে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত আছে।”
নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চে সে সময় অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিলেন বলে নৌপুলিশের ভাষ্য। যাত্রীদের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও নিখোঁজ থাকেন বেশ কয়েকজন।
ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মীরা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে তল্লাশি চালিয়ে দুই শিশুসহ ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে চারটি লাশ রাতেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
যাদের লাশ শনাক্ত হয়েছে তারা হলেন- মো. জয়নাল (৫০), স্মৃতি (২০), আরিফা বেগম (৩৫) ও তার দেড় বছরের সন্তান শাফায়েত।
এর বাইরে একটি শিশু ও একজন পুরুষের লাশ নারায়ণগঞ্জ নৌ থানা প্রাঙ্গণে রাখা হয় রাতে।
নৌ পুলিশের কাছে চারজনের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য দিয়েছেন তাদের স্বজনেরা। তারা হলেন আব্দুল্লাহ জাবেদ (২৭), হাতেম আলী (৬০), আরোহী (১৮ মাস) এবং জোবায়ের হোসেন।
সন্ধ্যার পর আলোর অভাবে ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি স্থগিত রাখা হলেও রাত পৌনে ১০টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে পৌঁছালে লঞ্চটি টেনে তোলার কাজ শুরু হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, রূপসী-৯ জাহাজটি একপাশ থেকে চলন্ত লঞ্চটির ওপর চেপে বসেছে। লঞ্চের আতঙ্কিত যাত্রীরা নদীতে লাফিয়ে পড়ছেন। এ অবস্থা চলে প্রায় ২৫ সেকেন্ড। এক পর্যায়ে লঞ্চটি ডুবে যায়।
রাকিব আল রাজু পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,লঞ্চটি চাপা পড়ার পরও জাহাজের গতি কমাননি চালক।
কয়েক ঘণ্টা পর মুন্সীগঞ্জের হোসেনদি এলাকা থেকে রূপসী-৯ এবং এর মাস্টারকে আটক করে নৌ-পুলিশ।
এ ঘটনা তদন্তে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জরুরি যোগাযোগে ‘হটলাইন’
লঞ্চডুবির ঘটনায় জরুরি যোগাযোগের জন্য বিআইডব্লিউটিএ একটি ‘হটলাইন’ খুলেছে; যারা নম্বর-১৬১১৩।
বিআইডব্লিউটিএর এর উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠ তলায় ৬১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এই হটলাইন চালু করা হয়েছে।
এছাড়া আরও দুটি টেলিফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হল- +৮৮০২২২৩৩৫২৩০৬; মোবাইল- +৮৮০১৯৫৮৬৫৮২১৩।
মিজানুর বলেন, এই লঞ্চ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের জন্য এই হটলাইন যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।