বাজারভিত্তিক করার অংশ হিসেবে চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে ঠিক হবে সুদহার, বলেন তিনি।
Published : 05 May 2024, 09:00 PM
খুব শিগগির ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা তুলে নিয়ে বাজারভিত্তিক করার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
তিনি বলেছেন, ‘‘সুদহার সীমা তুলে নেওয়া হবে। ব্যাংকগুলো চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ঠিক করবে। ঋণের সুদে কোনো বিধি নিষেধ থাকবে না।’’
তবে কবে নাগাদ ঋণের সুদহারের বর্তমান সীমা তুলে নেওয়া হবে তার কোনো নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানাননি তিনি।
রোববার রাজধানী ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে ‘ফার্স্ট ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ঢাকা’ শীর্ষক দুই দিনের সম্মেলনের প্রথম দিনের এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ও বণিক বার্তা যৌথভাবে প্রথমবারের মতো দুই দিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে ‘ফিসক্যাল অ্যান্ড মনিটরি পলিসিস ইন দ্যা ইভলভিং ইকোনোমিক অর্ডার’ শীর্ষক অধিবেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর, সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদরা অংশ নেন। এতে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির মধ্যে সমন্বয় না হওয়ার দুর্বলতা এবং সেগুলোর সমাধানের বিষয়ে উঠে আসা বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
এ অধিবেশনে গভর্নর রউফ তালুকদার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবর্তিত ‘স্মার্ট’ সুদহার পদ্ধতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিলেন। চলতি মাস থেকেই তা কার্যকর হওয়ার আভাসও মিলল।
স্মার্ট রেট উঠে গেলে সুদহার ঠিক করতে ২০২০ সালের এপ্রিলের আগের অবস্থানে চলে যাবে দেশের ব্যাংক খাত।
গভর্নর এখন বলেছেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার ঠিক হবে বাজারভিত্তিক।
২০২০ সালের এপ্রিলের আগে ব্যাংক খাতে উচ্চ হারে সুদহার নেওয়া হত। এতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায় খরচ বাড়ছে; এমন যুক্তি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সুদহার নামিয়ে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ ঠিক করে দেন।
পরে মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার সামাল দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ নেওয়ার সময় সংস্থাটির শর্তে ঋণের সুদহারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে নেওয়া হয় গত বছরের জুলাইতে।
তখন থেকে প্রতিমাসে স্মার্ট রেট প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের জুন ও জুলাইয়ে মাসে যা ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ এবং সবশেষ মার্চে যা ছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
‘স্মার্ট’ প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ মাসে বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ বেসিস পয়েন্ট বা ৪৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এতে সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশের বেশি সুদহার নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে ‘স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিলস- স্মার্ট)’ এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে ঋণ সুদ ঠিক করতে পারে ব্যাংক।
আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নে বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা ফের চালু করার ইঙ্গিত দিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
অধিবেশনে বিনিময় হার প্রসঙ্গে রউফ গভর্নর আব্দুর রউফ বলেন, ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে। এরপরই বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থায় যাবে বাংলাদেশ।
সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির চেয়ে সরকারের র্ব্যথতা বেশি। মন্ত্রণালয়গুলো একেক রকম ঘোষণায় বাজারের সরবরাহ ব্যবস্থা প্রভাবিত হয়েছে।
মুদ্রানীতির কার্যকর ফল পেতে বাংলাদেশকে নীতিগত বিষয়ে শক্ত অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্বশাসন তো দেওয়া আছে। সবকিছু পুরোটা দিয়ে দেওয়া হয় না, অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংককে তা এখন অর্জন করতে হবে।”
মূল্যস্ফীতের তাপ মানুষের গায়ে লাগছে মন্তব্য করে আরেক সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ‘‘যারা বাজারে যান তারা বুঝতে পারেন। যেভাবেই হোক মূল্যস্ফীতি একটু কমাতে হবে।’’
তার কথার সমর্থনে আব্দুর রউফের আগে সবশেষ গভর্নরের দায়িত্ব পালন করা ফজলে কবির বলেন, ‘‘মূল্যস্ফীতির আঘাত সবচেয়ে বেশি লাগে দরিদ্র ও নির্ধারিত আয়ের মানুষের। মূল্যস্ফীতি কারও জন্যই ভালো না। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো না।’’
মূল্যস্ফীতি উসকে দিতে সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের কথাও উঠে আসে আলোচনায়।
জ্বালানি ও কৃষি খাতে সার বাবদ ভর্তুকি দিতে ব্যাংকগুলোকে তাদের পাওনার বিপরীতে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বন্ড বাজারে ছাড়ে।
সাবেক সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘‘এভাবে ২০ হাজার কোটি টাকার সরকারের বন্ড বাজারে এক লাখ কোটি টাকার কাজ করছে। এটিও টাকা ছাপানোর মতো। এভাবে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিলে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমবে।’’
এর উত্তরে গভর্নর আব্দুর রউফ বলেন, গত বছরের সেপেটম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিচ্ছে না। বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে। আর বন্ড ছাড়া মানে টাকা ছাপানো কি না তা গবেষণার দাবি রাখে।
সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ তারেক বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নইলে আগামী বাজেটেও সরকারকে বেশির ভাগ অর্থ ধার করতে হবে।
আরও পড়ুন...
এপ্রিলে ব্যাংক ঋণে সুদহার বেড়ে সর্বোচ্চ ১৩.৫৫%