ঘাটে বসে বন্ধু আব্দুল্লাহ জাবেদের জন্য কাঁদছিলেন তরুণ তানভির। তারা চার বন্ধু বেড়াতে মুন্সীগঞ্জে যাওয়ার জন্য লঞ্চে উঠেছিলেন। লঞ্চডুবির পর তিন বন্ধু সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও এখনও নিখোঁজ জাবেদ।
Published : 20 Mar 2022, 08:56 PM
রোববার দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯ পেছন থেকে চাপা দিলে ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জগামী এই লঞ্চের অর্ধশত যাত্রীর মধ্যে ছিলেন চার বন্ধু কাওকাবুর রহমান, তানভির, আব্দুল্লাহ জাবেদ ও মাহফুজুর রহমান।
তানভিরের সঙ্গে কাওকাবুরসহ তার আরও বন্ধুরাও জড়ো হয়েছেন শীতলক্ষ্যা পাড়ে, জাবেদের খোঁজে।
কাওকাবুর বলেন, তারা চারজনই লঞ্চের নিচতলায় ছিলেন। কার্গো জাহাজটি যখন লঞ্চটিকে চাপা দেয়, তখন লঞ্চজুড়ে মানুষের আর্তচিৎকার। সবাই কার্গো জাহাজটিকে থামাতে বলছিল।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কাওকাবুর নদীতে লাফিয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, তার তিন বন্ধুও নদীতে ভেসে উঠেছিলেন। জাবেদকে তিনি সাঁতার কাটতেও দেখেন। তবে তীরে এসে তানভির ও মাহফুজুরকে খুঁজে পেল জাবেদকে পাননি।
এদের মধ্যে দূষিত নোংরা পানি পেটে যাওয়ায় মাহফুজুর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে।
বাকি বন্ধুরা এখনও রয়েছেন নিখোঁজ বন্ধুর অপেক্ষায়। তাদের আশা, জীবিতই ফিরে পাবেন তাদের হারানো বন্ধুকে।
সন্ধ্যার পর পর্যন্ত ছয়টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা নদীর নিচে লঞ্চটি চিহ্নিতও করেছেন। তবে রাত হওয়ায় উদ্ধারকাজ স্থগিত রাখা হয়েছে।
কাওকাবুর বলেন, “ওর (জাবেদ) স্বাস্থ্য ভালো, বয়সও কম, ও কই হারাবে বলেন! আমার তো বিশ্বাস হয় না যে ওর খারাপ কিছু হইছে।”
এই চার তরুণই নারায়ণগঞ্জ শহরে থাকেন, আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেন। কয়েকদিন বেশ কাজের চাপ ছিল। তা কমায় লঞ্চে মুন্সীগঞ্জে বেড়াতে যাচ্ছিলেন।
হাতেম আলীর খোঁজে সন্তানরা
শীতলক্ষ্যা পাড়ে কাঁদতে দেখা গেল মুন্সীগঞ্জের হাতেম আলীর মেয়ে কাকলি আক্তারকে। কান্নার মাঝেই খবর নিচ্ছিলেন তার বাবার খোঁজ মিলেছে কি না?
হাতেম আলী ‘এমএল আফসার উদ্দিন’ লঞ্চে ছিলেন কি না, তা তার সন্তানরা নিশ্চিত নন। তবে লঞ্চডুবির পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের ধারণা, এই লঞ্চেই ফিরছিলেন তারা।
অসুস্থ হাতেম আলী ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে গিয়েছিলেন সকালে। বারডেম থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে মুন্সিগঞ্জ রওনা হয়েছিলেন।
সন্তানরা জানান, মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকা যাতায়াতের জন্য সাধারণত মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ পথের লঞ্চ বেছে নিতেন হাতেম আলী।
অর্থাৎ তিনি লঞ্চে মুন্সীগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ এসে বাসে উঠতেন। আবার ঢাকা থেকে বাসে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে মুন্সীগঞ্জের লঞ্চে উঠতেন।
হাতেম আলীর ছেলে মো. সাগর বলেন, দুপুর ১২টার দিকে তার মায়ের সঙ্গে বাবার সর্বশেষ কথা হয়েছিল। তখন তিনি জানিয়েছিলেন ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ রওনা হয়েছেন।
সময় মিলিয়ে তারা ধারণা করছেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ওই লঞ্চটিতে তাদের বাবা ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলছেন, লঞ্চে অবস্থানরতদের সঙ্গে কথা বলে তারা ধারণা করছেন নৌযানটি ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো যাত্রী ছিল। এখনও ১৬ থেকে ২০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
আরও পড়ুন