জাহাজে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন, তারা সবাই জিম্মি দশায় পড়েছেন বলে জাহাজের মালিকপক্ষ জানিয়েছে।
Published : 13 Mar 2024, 11:36 PM
‘আমাদের সোমালিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, হয়ত আর যোগাযোগ হবে না’ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি খুলনার এক নাবিক পরিবারের সঙ্গে শেষবার একথা বলেছেন বলে জানান স্বজনরা।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের মধ্যে খুলনা নগরের ছোট বয়রা করিমনগর এলাকার বাসিন্দা ও জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম রয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টার পর মা ও স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে সবশেষ কথা হয় তৌফিকুলের। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার করিম নগর এলাকার তৌফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তৌফিকুলের বাবা ইকবাল হোসেন বাড়িতে নেই। মা দিল আফরোজ, স্ত্রী জোবায়দা নোমান ও তৌফিকুলের দুই সন্তান তাসফিয়া তাহসিনা (৭) ও আহমেদ রুসাফি (৫) রয়েছেন।
তৌফিকুলের মা আফরোজা জানান, তারা ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকার বাসিন্দা। ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে খুলনা শহরে বসবাস করেন।
আফরোজা বলেন, “মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে সবশেষ ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল। বলল, ‘আম্মা আমি ভালো আছি, চিন্তা করো না’। আমি বললাম, চিন্তাত লাগেই। তোমরা বন্দি অবস্থায়। টেনশন তো হয়। এই বলতে বলতেই আর কথা নেই।”
মনে হলো মোবাইল ফোনটা কেউ কেড়ে নিল; ছেলের সঙ্গে এই শেষ কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তৌফিকুলের স্ত্রী জোবায়দা স্বামীকে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে কথা হয়েছিল। তিনি ফোনে বলছিলেন, ‘দোয়া করো। আমাদের সোমালিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, হয়ত আর যোগাযোগ হবে না।’ এটাই শেষ কথা।”
বুধবার পর্যন্ত তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে জানান তিনি।
মা জোবায়দা বলেন, “চট্টগ্রামের এস আর শিপিং থেকে ফোন করে পরিবার থেকে লোক পাঠাতে বলেছিল। আমার মেজ ভাসুর এবং ভাই চট্টগ্রামে গেছেন।”
সবকিছুর বিনিময়ে হলেও ছেলে ও তার সহকর্মীদের সুস্থভাবে ফেরত চেয়ে সরকারের কাছে আর্জি জানান তিনি।
মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী একটি জাহাজ।
এমভি আবদুল্লাহ নামের ওই জাহাজে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন; তারা সবাই জিম্মি দশায় পড়েছেন বলে জাহাজের মালিকপক্ষ জানিয়েছে।
কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে।
জাহাজে থাকা নাবিক ও ক্রুরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ বিপ্লব, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
এমভি আবদুল্লাহ থাকা ২৩ জন নাবিক এখন পর্যন্ত নিরাপদ ও সুস্থ আছেন জানিয়ে বুধবার নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো মূল্যে নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর।
আরও পড়ুন:
জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশি জাহাজ ‘আবদুল্লাহ’, ২৩ নাবিক জিম্মি
জলদস্যুর কবলে জাহাজ: এমভি আবদুল্লাহে জিম্মি যারা
জিম্মি হওয়ার আগে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দুই নাবিকের বার্তা
জাহান মণি থেকে আবদুল্লাহ: ২৩ নাবিকের মুক্তি মিলবে কীভাবে
ছিনিয়ে নেওয়া ইরানি ট্রলারে করে এসে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি
এমভি আবদুল্লাহ: টাকা না দিলে ‘একজন একজন করে মেরে ফেলার’ হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুরা
এমভি আবদুল্লাহ: উৎকণ্ঠায় তারেকুলের পরিবার, থামছে না মায়ের কান্না