চলতি রবি মৌসুমে ৫ উপজেলার ৬০০ জনকে বীজ-সার দেওয়া হয়। তা দিয়ে কৃষকদের ৬০০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার কথা।
Published : 05 Dec 2024, 05:11 PM
পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমদানি নির্ভরতা কমাতে গোপালগঞ্জে ৬০০ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে পেঁয়াজ বীজ দেওয়া হয়েছে। তবে বীজ বপনের পর ৪২০জন চাষির মাঠে মাত্র ৫-১০ ভাগ চারা গজিয়েছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই চাষিরা।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামার বাড়ির উপপরিচালক আ. কাদের সরদার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমদানি নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্য প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চলতি রবি মৌসুমে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে ১ কেজি করে পেঁয়াজ বীজ, ১০ কেজি ডিএপি এবং এমওপি সার প্রদান করা হয়।
কর্মসূচির আওতায় গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলার ৬০০ জনকে বীজ-সার দেওয়া হয়। তা দিয়ে কৃষকরা ৬০০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার কথা।
বীজ-সার পেয়ে কৃষকরা ২০ নভেম্বর জমিতে পেঁয়াজ বীজতলায় বা মাঠে বপন করেন। কিন্তু বপনের ১০ দিন পর বীজতলা বা মাঠে মাত্র ২৫ ভাগ পেঁয়াজ চারা গজায়। ৭৫ ভাগ পেঁয়াজ বীজ গজায়নি।
কাশিয়ানী উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামের কৃষক তুহিন মোল্যা বলেন, “গত ২ বছর ধরে পেঁয়াজের বাজার চড়া। পেঁয়াজ চাষ করে অধিক লাভের আশা করেছিলাম। তাই গত মাসে কাশিয়ানী উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে ১ কেজি পেঁয়াজের বীজ ও সার পাই। সে বীজ দিয়ে বীজতলা করেছি।
“কিন্তু ১০ দিন পর মাত্র ৫ ভাগ পেঁয়াজ গজায়। ৯৫ ভাগ গজায়নি। শুধু আমি না, আমাদের এলাকায় ৩-৪ জন প্রণোদনার পেঁয়াজ বপন করেছিলেন। কারও বীজে চারা গজায়নি। সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
“এ বছর পেঁয়াজের আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছি। এখন সরকার আমাদের পাশে না দাড়ালে পেঁয়াজের উৎপাদন কমে যাবে। দেশে পেঁয়াজের সংকট হবে।”
কাশিয়ানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইজাজুল করিম বলেন, “বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কাছ থেকে এসব বীজ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ক্রয় করে। এ উপজেলার বারি-৪ ও তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজ বীজ ১৪০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়।
“জমিতে বপনের ১০ দিন পর বীজ মাত্র ৫-১০ ভাগ গজায়। যারা বীজতলা বা মাঠে বপন করেননি, তাদের মাঠে পেঁয়াজ বীজ ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। পরে বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই।
এর মধ্যে সোমবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গঠন করা তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে মাঠে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করেছেন। এছাড়া ঢাকা থেকে একটি টিমও এখানে এসে বিষয়টি তদন্ত করবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।”
অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আ. কাদের সরদার বলেন, “তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। জেলায় ৬০০ কৃষকের মধ্যে বারি-১, বারি-৪ ও তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজ বীজ দেওয়া হয়।
“এর মধ্যে ৪২০ জনকে বারি-৪ ও তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজ বীজ দেওয়া হয়। তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের বীজতলা বা মাঠে মাত্র ৫/১০ ভাগ পেঁয়াজ গজিয়েছে।
“বাকী ১৮০ জনকে বারি-১ জাতের পেঁয়াজ বীজ দেওয়া হয়। তাদের সমস্যা হয় নি। এ জাতের বীজ ৯০ ভাগ গজিয়েছে।”
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের নতুন করে বীজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। দ্রুত তাদের পেঁয়াজ বীজ দিয়ে চাষাবাদে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
“আশা করছি এতে জেলায় পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পেঁয়াজ চাষাবাদ করে কৃষক লাভবান হবেন। সরকারের উদ্দেশ্যও সফল হবে।”
আরও পড়ুন