“দানা যহন পাই তখন তো প্যকেট করা ছিলে। প্যাকেট ছিড়ে দেহি ময়লা ময়লা। তহনই বুঝছি দানা ভালো না।”
Published : 02 Dec 2024, 02:44 PM
“সরকার থেকে এক কেজি পেঁয়াজের দানা দিছিলো। কিন্তু একটা দানা থেকেও চারা গজায় নাই। কি দানা দিলো কৃষি অফিসাররা? এহন এক কেজি দানা কিনতে ১৫-২০ হাজার টাকা লাগবে। আমার তো বিশাল ক্ষতি হয়া গেল।”
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ী কালুখালী উপজেলার মাজবাড়ি ইউনিয়নের চরশ্রীপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি বাচ্চু খান।
বাচ্চুর মত জেলার আরও অনেক চাষির কাছে প্রনোদণার বীজ এখন গলার কাঁটা। বীজ থেকে চারা না গজায় চলতি বছর পেঁয়াজ চাষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। মোটা অঙ্কের লোকসানও গুনতে হচ্ছে তাদের।
এ অবস্থার জন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদেরই দায়ী করছেন চাষিরা। তাদের অভিযোগ, সরকারি যে পেঁয়াজ বীজ দিয়েছে তা ‘ভেজাল’। বীজতলা দেওয়ার দুই সপ্তাহ পার হলেও কোনো চারা গজায়নি। প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজই এখন জেলার কৃষকদের দুশ্চিন্তার কারণ।
বীজ থেকে চারা উৎপাদন না হওয়ার বিষয়ে রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করেছেন তারা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে তাদের সহায়তার দেওয়া হবে।
চরশ্রীপুর গ্রামের আকবর খান নামের আরেক আরেক পেঁয়াজ চাষি বলেন, “সরকার কৃষকের দানা দেছে উন্নতির জন্নি না ক্ষতি করার জন্নি। এ বছর পিজির (পেঁয়াজের) চাষ মাইর গেলো। এই জমিতি এহন কিছু করা যাবি নানে। এম্মাই ফেলা রাখতি হবি। এহন আমাদের চাওয়া সরকারের যেনো ক্ষতিপূরণ দেয়।”
আকবরের কথা শেষ হতেই পাশে দঁড়িয়ে থাকা উজ্জ্বল খান বলেন, “সরকার থেকে আমার ভাই পিজির দানা পাইছিল। সেই দানা থেকে চারা গজায় নাই। ভাই আশা করছিল ৫০ শতাংশ জমিতি পিজ লাগাবি।
“এহন তালি ভাই কি করবি? তার তো সব দানাই মাইর। যদি বাইরে থেকে হালি কিনে আনে তালি টাকা লাগবি ৪০-৫০ হাজার। তালি এই লোকসানের ক্ষতি কিডা দিবি?”
কৃষক আতিয়ার হোসেন বলেন, “দানা যহন পাই তখন দানা তো প্যকেট করা ছিলে। প্যাকেট ছিড়ে দেহি দানা ময়লা ময়লা। তহনই বুঝছি দানা ভালো না। কিন্তু সে সময় কিছু করার নাই জমি বানা ফেলছি, দানা ভিজে ফেলছি । সে জন্নি ওম্মাই চারা দিই।”
তিনি বলেন, “এহন নতুন করে দানা দেওয়ারও সুযোগ নাই। চারা কিনতে গেলেও ম্যালা টাকা লাগবি। কি এ্যটা ক্ষতি হলো কনতো দেহি?”
পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের চাষি করিম শেখ বলেন, “এহন চারা কিনে লাগাতি হবিনি। তা না হলি জমি ফ্যালা রাহা লাগবি। খালি আমার যে চারা গজায় নাই তা না। আমার জানা মতে, যারা বীজ পাইছিলো কারোই গজায় নাই।”
‘ভেজাল বীজের’ কারণে এমন দশা হয়েছে বলে অভিযোগ মৌরাট ইউনিয়নের পেঁয়াজ চাষি ফারুক মিয়ার।
তিনি বলেন, “আমি বাজার থেকে বীজ কিনে চারা দিয়েছিলাম তা গজিয়ে অনেক বড় হয়েগেছে। সরকারের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করা।”
কালুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পূর্ণিমা হালদার বলেন, এ বছর তার উপজেলায় ৮০০ কৃষককে প্রণোদনার পেঁয়াজের বীজ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে একশ জন বারি-১, দুইশ জন বারি-৪ এবং পঁচশ জন তাহিরপুরী জাতের বীজ পেয়েছিলেন। যাদের বীজ দেওয়া হয়েছে তারা বীজতলা দেওয়ার পর ওই বীজ গজায়নি।
এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কারণটা জানার চেষ্টা করছি আমরাও। বিষয়টি আমাদের ঊর্ধর্তন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশ (বিএডিসি) সরবরাহ করা হয়েছিল বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম জানান।
তিনি বলেন, “এ বছর জেলার ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজের আবাদ হওয়ার কথা রয়েছে। বিএডিসি থেকে সরবরাহ করা পেঁয়াজ বীজ কৃষি অফিসের প্রণোদনা কর্মসূচির অংশ হিসাবে চলতি বছর জেলায় ৪ হাজার কৃষকের মাঝে বারি-১, বারি-৪ ও তাহিরপুরী জাতের বীজ দেওয়া হয়। প্রতি কৃষককে এক কেজি করে মোট ৪ হাজার কেজি বীজ দেওয়া হয়েছে। পরে পেঁয়াজের বীজ গজাচ্ছে না এমন খবরে আমরাও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সত্যতা পেয়েছি।”
শহিদুল বলেন, “আগামী সপ্তাহে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির মিটিং করবো। মিটিং শেষে আমরা সিন্ধান্ত নেব ক্ষতিগ্রস্স্ত চাষিদের কি ধরনের সহায়তা করা হবে।”