বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার মান পরীক্ষার দামি যন্ত্র চুরির ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় চুরির কাজে ব্যবহৃত গাড়িটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার গভীর রাতে রামপাল উপজেলা থেকে এ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে রামপাল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুদ্দীন জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার শোলাকুড়া গ্রামের আবু তাহের (৪৬) এবং চাকশ্রী গ্রামের হাওলাদার সোহেল (২৭)।
আবু তাহের একটি বেসরকারি কোম্পানির অধীনে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গাড়ি চালাতেন। জব্দ পিকআপ করে মেশিন চুরি করা হয়েছিল। মেশিনটি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় সোহেলকে সহযোগী হিসেবে নিয়ে যান আবু তাহের।
এ নিয়ে যন্ত্র চুরির ঘটনায় ছয়জন গ্রেপ্তার হলেন। এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকার ডেমরা এলাকা থেকে বোম ক্যালরিমিটার (BOMB CALORIMETER) যন্ত্রটি উদ্ধার করে পুলিশ।
রামপাল থানায় দায়ের করা (রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র) মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলা গ্রেপ্তার সবাইকে দেখানো হয়েছে।
ওসি মোহাম্মদ সামছুদ্দীন বলেন, এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত তাদেরও গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কাজ করছে।
১৪ জানুয়ারি রাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেমিক্যাল হাউস এরিয়ার কয়লা টেস্টিং ল্যাব-২ থেকে যন্ত্রটি চুরি হয়ে যায়।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জিনিসপত্র চুরি যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। বারবার সেখানে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। গত ১৫ মাসে র্যাব ও আনসার ব্যাটালিয়নের অভিযানে এই কেন্দ্র থেকে চুরি যাওয়া কোটি টাকা মূল্যের মালামাল উদ্ধার হয়েছে। আটক করা হয় ৫৪ জনকে।
এসব চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাধারণত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এবার সংরক্ষিত এলাকা ও কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য থেকে দামী যন্ত্র খোয়া যাওয়ার পর কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটির নিরাপত্তার জন্য ১৫০ জন আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য, ৩০ সাধারণ আনসার, ১৭ জন পুলিশ সদস্য ছাড়াও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভেল-এর নিজস্ব সেন্ট্রি সিকিউরিটি সার্ভিস এবং জেরিন সিকিউরিটি সার্ভিসের ৯৬ জন কর্মী রয়েছে।
রামপাল উপজেলার সাপমারী কাটাখালী মৌজায় অধিগ্রহণ করা ৯১৫ একর জায়গার মধ্যে ৪৫০ একর জায়গায় সীমানা প্রাচীর রয়েছে। এই প্রাচীরে মোট নয়টি গেট। এর বাইরে প্রায় দুই কিলোমিটার নদীর সীমানাসহ বাকি জায়গা অরক্ষিতই বলা চলে।
২০১০ সালের অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাতীয় তাপ বিদ্যুৎ করপোরেশনের (এনটিপিসি) মধ্যে বাগেরহাটের রামপালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে সমঝোতা হয়। এর দুই বছর পর ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি এনটিপিসির সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। তবে শুরু থেকেই সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন পরিবেশবাদীরা।
বিআইএফপিসিএল কোম্পানির অধীনে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট মূলত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নামে পরিচিত। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় এক হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।
গত বছরের ১১ জুলাই বয়লার স্টিম ব্লোয়িং স্থাপন করা হয়। এক মাস পরে ১৪ অগাস্ট টারবাইন-এ স্টিম ডাম্পিং এবং একদিন পরে ১৫ অগাস্ট জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ (ট্রান্সমিশন) শুরু করা হয়।
৬ সেপ্টেম্বর ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে কয়লাচালিত মৈত্রী পাওয়ার প্ল্যান্টের ইউনিট-১ এর উদ্বোধন করেন।
১৭ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে বাগেরহাটের কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
কিন্তু ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার ২৭ দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখনও কেন্দ্রটি উৎপাদনে ফিরতে পারেনি।
আরও পড়ুন:
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে তালাবদ্ধ ঘর, সশস্ত্র পাহারার মধ্যে চুরি দামি যন্ত্র
ডলার সংকটে কয়লার আমদানি নেই, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ
বাণিজ্যিক উৎপাদনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, জাতীয় গ্রিডে যাচ্ছে ৬৬০ মেগাওয়াট