রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সেই দামি যন্ত্রটি ঢাকায় উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪

এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2023, 09:38 AM
Updated : 3 Feb 2023, 09:38 AM

বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কেমিক্যাল হাউস এলাকার ল্যাব থেকে চুরি যাওয়া প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের কয়লার মান পরীক্ষার যন্ত্রটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকার ডেমরা এলাকা থেকে যন্ত্রটি (BOMB CALORIMETER) উদ্ধার করা হয় বলে রামপাল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুদ্দীন জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পিরোজপুর সদর উপজেলার নরখালী গ্রামের মো. রাব্বী ইসলাম ওরফে গোলাম রাব্বী (২৪), বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার লখপুর ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের মো. আব্দুল কারিম (২৭), রামপাল উপজেলার চিত্রা গ্রামের কার্তিক শীল (২৫) এবং একই উপজেলার বর্নি গ্রামের বাদশা শেখ (২৩)।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তালাবদ্ধ ঘর, সশস্ত্র পাহারার মধ্যেই ১৪ জানুয়ারি রাতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি কয়লার মান নির্ণয়ের 'বোম্ব ক্যালরিমিটার' যন্ত্রটি হারিয়ে যায়। পরদিন কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও নিরাপত্তা) মো. অলিউল্লাহ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। ১৯ দিন পর যন্ত্রটি উদ্ধার করল পুলিশ।

শুক্রবার দুপুরে রামপাল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুদ্দীন থানা প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৪ জানুয়ারি রাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেমিক্যাল হাউস এরিয়ার কয়লা টেস্টিং ল্যাব-২ থেকে যন্ত্রটি চুরি হয়ে যায়। এরপর রামপাল থানা পুলিশ মামলা তদন্ত নেমে ঘটনার ১৯ দিনের মাথায় যন্ত্রটি উদ্ধার করেছে।

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকালে বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা থেকে রাব্বিকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার ডেমরার কোনাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে জড়িত আরও একজনকে আটক করা হয়। সেখান থেকে যন্ত্রটিও উদ্ধার করি।”

এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জিনিসপত্র চুরি যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। বারবার সেখানে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। গত ১৫ মাসে র‌্যাব ও আনসার ব্যাটালিয়নের অভিযানে এই কেন্দ্র থেকে চুরি যাওয়া কোটি টাকা মূল্যের মালামাল উদ্ধার হয়েছে। আটক করা হয় ৫৪ জনকে।

এসব চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাধারণত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এবার সংরক্ষিত এলাকা ও কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য থেকে দামী যন্ত্র খোয়া যাওয়ার পর কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে।  

বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটির নিরাপত্তার জন্য ১৫০ জন আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য, ৩০ সাধারণ আনসার, ১৭ জন পুলিশ সদস্য ছাড়াও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভেল-এর নিজস্ব সেন্ট্রি সিকিউরিটি সার্ভিস এবং জেরিন সিকিউরিটি সার্ভিসের ৯৬ জন কর্মী রয়েছে। 

রামপাল উপজেলার সাপমারী কাটাখালী মৌজায় অধিগ্রহণ করা ৯১৫ একর জায়গার মধ্যে ৪৫০ একর জায়গায় সীমানা প্রাচীর রয়েছে। এই প্রাচীরে মোট নয়টি গেট। এর বাইরে প্রায় দুই কিলোমিটার নদীর সীমানাসহ বাকি জায়গা অরক্ষিতই বলা চলে।

২০১০ সালের অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাতীয় তাপ বিদ্যুৎ করপোরেশনের (এনটিপিসি) মধ্যে বাগেরহাটের রামপালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে সমঝোতা হয়। এর দুই বছর পর ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি এনটিপিসির সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে চুক্তি হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। তবে শুরু থেকেই সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন পরিবেশবাদীরা।

বিআইএফপিসিএল কোম্পানির অধীনে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট মূলত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নামে পরিচিত। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় এক হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।

গত বছরের ১১ জুলাই বয়লার স্টিম ব্লোয়িং স্থাপন করা হয়। এক মাস পরে ১৪ অগাস্ট টারবাইন-এ স্টিম ডাম্পিং এবং একদিন পরে ১৫ অগাস্ট জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ (ট্রান্সমিশন) শুরু করা হয়।

৬ সেপ্টেম্বর ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে কয়লাচালিত মৈত্রী পাওয়ার প্ল্যান্টের ইউনিট-১ এর উদ্বোধন করেন।

১৭ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে বাগেরহাটের কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। 

কিন্তু ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার ২৭ দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখনও কেন্দ্রটি উৎপাদনে ফিরতে পারেনি। 

আরও পড়ুন:

Also Read: রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে তালাবদ্ধ ঘর, সশস্ত্র পাহারার মধ্যে চুরি দামি যন্ত্র

Also Read: ডলার সংকটে কয়লার আমদানি নেই, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ

Also Read: বাণিজ্যিক উৎপাদনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, জাতীয় গ্রিডে যাচ্ছে ৬৬০ মেগাওয়াট