১২ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ অগ্নিকাণ্ডে ১৮২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে৷
Published : 29 Dec 2024, 08:18 PM
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারস কারখানায় লুটপাটের পর আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধান চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা৷
রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা৷ এ সময় তারা নিখোঁজ ব্যক্তিদের ছবি হতে নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কটিও অবরোধ করেন৷
প্রায় আধাঘণ্টা তারা সড়কে অবস্থান করেন৷ ফলে ব্যস্ত সড়কটিতে যানজট দেখা দেয়৷
পরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক বিক্ষোভরত স্বজনদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। স্বজনদের নিয়ে পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলোচনা করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হুসাইন৷
শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৫ অগাস্ট যানবাহনের চাকার টায়ার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গাজী টায়ারসে লুটপাটের পর আগুন দেয় কিছু লোক। টানা পাঁচ দিন ধরে আগুন জ্বলে এ কারখানায়৷
কারখানাটির মালিক আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী৷
১২ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ অগ্নিকাণ্ডে ১৮২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে৷
বিক্ষোভে ছেলে হারানো এক মা বলছিলেন, “আমরা কত জায়গায় গেছি, কোনো জায়গায় আমরা বিচার পাই না। আমরা সন্তান চাই, আমরার সন্তানদের আপনেরা খোঁইজা দেন।”
স্বামীহারা এক নারী তার সন্তানদের নিয়ে এসেছেন এই অবরোধে। তিনি কোলে শিশুকে নিয়ে বলছিলেন, “আমার স্বামী দুইটা সন্তান রেখে গেছে। চার মাস ধরে কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। তার ফোন বাজে কিন্তু রিসিভ হয় না।”
ছেলেহারা এক মা বলছিলেন, “আজকে চার মাস পড়ছে, আমি সন্তানহারা। চার মাস ধইরা আমরার খাওয়া নাই, লওয়া নাই। আমরা পাগলের লাহান ঘুরি, কোনো জায়গায় গেলে আমরার অভিযোগও লয় না। আজকা চার মাস। থানায় কোনো জিডি লয় না। কয়, সব মানুষ পুইড়া গেছে।”
সন্তানহারা এক মা বলছিলেন, “চার মাস ধইরা আমার সন্তান নিখোঁজ। এখন রূপগঞ্জ থানায় গেছি। হেরা কোনো কিছু দেখে না। আমি তো আমার সন্তানরে চাই।”
স্বজনরা আরো বলেন, আগুনের ঘটনার চার মাস পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজদের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি সরকারি কোনো সংস্থা৷ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলছে না প্রশাসনের লোকজন৷ কারখানার ভেতরে দেহাবশেষ কিছু আছে কি-না সে ব্যাপারেও অনুসন্ধান চালানো হয়নি৷
নিখোঁজদের সন্ধান দিতে প্রশাসন অবহেলা করছে বলেও অভিযোগ করেন স্বজনরা৷
এ ব্যাপারে পরে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, গাজী টায়ারসে আগুনের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত কমিটি ১৮২ জন নিখোঁজের একটি তালিকা তৈরি করেছে।
“তাদের ভাগ্যে আসলে কি ঘটেছে সেটা যাচাই-বাছাই করার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, “গাজী টায়ারসে আগুনের ঘটনায় একটি জিডি দায়ের হয়েছিল এবং জেলা প্রশাসনের একটি তদন্ত কমিটিও প্রতিবেদন দিয়েছে। সে বিষয় নিয়ে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
“ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে।”