“পরিবর্তনের চিহ্ন রাখার জন্য এই সরকারের প্রথম কাজ ছিল ত্বকী, তনু, সাগর-রুনি, মুনিয়ার মতো খুনগুলোর বিচার নিশ্চিত করা”, বলেন তিনি।
Published : 28 Feb 2025, 08:54 PM
গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের প্রত্যাশা ছিল সন্ত্রাসমুক্ত, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা; কিন্তু তা কমে গিয়ে আবার হতাশা তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস পার হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে ছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাশা আস্তে আস্তে কমে গিয়ে আবার একটা হতাশা তৈরি হচ্ছে। হতাশা মানেই মানুষ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে তা না। হতাশাও অনেক সময় সক্রিয়তার বড় কারণ হয়।”
শুক্রবার বিকালে নারায়ণগঞ্জে ‘তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১২ বছর’ নিয়ে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’। সমাবেশে বর্তমান সরকার বিচারকাজ শুরু করতে না পারার পেছনে কারণ কী, প্রশ্ন রাখেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ স্বার্থে ত্বকী হত্যার তদন্ত ও বিচারকাজ বন্ধ রেখেছিল। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকারের উৎখাত হওয়ার সাত মাস পরেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ শুরু করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও ওই সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে আটকে থাকা অনেক হত্যাকাণ্ডের বিচার গত সাত মাসেও সম্পন্ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আনু মুহাম্মদ।
ত্বকী হত্যার বিচার দ্রুত শুরুর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে এটা আপনারা সবাই জানেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজে কীভাবে এই হত্যাকারীদের রক্ষা করেছেন তাও জানেন। তার প্রশ্রয়ে ও পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাফিয়াতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
“র্যাব-পুলিশের মধ্যে খুনিদের পৃষ্ঠপোষক ও ক্রসফায়ারের মতো ভয়ংকর নারকীয় অবস্থা তৈরি করেছিলেন তিনি। তারই অংশ হিসেবে তিনি ত্বকীর হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন, তাদের রক্ষা করেছিলেন। তার প্রত্যক্ষ ইঙ্গিতের কারণে ত্বকী হত্যার বিচার হয় নাই। শুধু ত্বকী নয়, গুম, খুনের অসংখ্য দৃষ্টান্ত এই বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে।”
ত্বকীর খুনিরা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে এবং আনন্দে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে? এমন প্রশ্নও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাখেন আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, “পরিবর্তনের চিহ্ন রাখার জন্য এই সরকারের প্রথম কাজ ছিল ত্বকী, তনু, সাগর-রুনি, মুনিয়ার মতো যে খুনগুলোর বিচারের জন্য মানুষ অনেকদিন অপেক্ষা করেছিল সেগুলো নিশ্চিত করা। এই বিচারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা তাদের জন্য কঠিন ছিল না।”
গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তির উত্থান ও ঐক্যবদ্ধ সক্রিয়তা ছাড়া এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হওয়া সম্ভব না বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
ত্বকী হত্যার বিচার শেখ হাসিনা করেনি, কারণ তার ‘মাফিয়ারা’ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে মন্তব্য করেন ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’র আহ্বায়ক ও ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা ত্বকী হত্যা নিয়ে কথা বলেছিলেন, র্যাব কিছু কাজও করল। ছয়জনকে তারা গ্রেপ্তার করেছিল, একজনের জবানবন্দিও নিয়েছিল। কিন্তু এরপর আর কিছু এগোয়নি।”
“ত্বকী হত্যার এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালে র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে তদন্ত প্রায় শেষ করে ফেলার কথা জানায়। একটি খসড়া চার্জশিটও তারা তৈরি করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই চার্জশিট পূর্ণাঙ্গ করছে না তারা”, বলেন রফিউর রাব্বি।
ত্বকী হত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার পরিবারের লোকজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আদালত বিদেশযাত্রায় তাদের নিষেধাজ্ঞা জারিরও সমালোচনা করেন তিনি।
শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’র সদস্যসচিব হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন এবং বাসদের সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বক্তব্য দেন।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা কুমুদিনী খাল থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যরা সম্পৃক্ত আছেন বলে অভিযোগ ত্বকীর পরিবারের।
ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে এক যুগ ধরে প্রতিমাসে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করা হয়।