সব দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতিও পালন করবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
Published : 24 Jun 2024, 12:19 AM
উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে বন্ধ হওয়ার ৫৩দিন পর শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। নিজেদের প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরতে পারায় উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা শুরু করেন। নিয়মানুযায়ী চালু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল কাইউম জানান, “ক্লাসে ফিরেছি। এটাই আমাদের আনন্দ। আমরা সেশনজট ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি আর চাই না।”
আরিফুর রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “দীর্ঘ বন্ধের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবার আশা করি শিক্ষকরা মনোযোগী হবেন ক্লাসে। আমাদের ক্ষতি তারাই পুষিয়ে দিতে পারেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, গত ৫জুন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
ওই সভায় বলা হয়, ৬ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি। ২১ ও ২২ জুন শুক্র-শনিবার। এ অবস্থায় ২৩ জুন থেকে ক্লাস শুরু হবে এবং অফিস খোলা হবে ৯ জুন থেকে।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল ৯৩তম সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্ব, শিক্ষক আন্দোলন ও অস্থিরতার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে, গত ২১ জুন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মাহমুদুল হাছান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ক্লাসে ফিরবেন শিক্ষকরা। একইসঙ্গে সব দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত শিক্ষকরা দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতিও পালন করবেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, “আমরা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মেনে সশরীরে ক্লাস নিচ্ছি। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে অনলাইনে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হলেও তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, “আমাদের সন্তানদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর যেন তাদের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে বলছেন শনিবারও প্রয়োজনে ক্লাস চালিয়ে নেবেন। আমি চাইব দিনের পুরো সময়ও যাতে ঠিকঠাক মতো ক্লাস হয়।”
শিক্ষক সমিতির দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “তাদের অনেক দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে।”
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপাচার্যের বাকবিতণ্ডা হয়। ওই সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা ও কর্মকর্তা সমিতির এক নেতা শিক্ষকদের হেনস্তা করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি তিন দফা দাবি দেয়। পরবর্তী সময়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ১৯ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক সমিতি।
এরপর ঈদুল ফিতরের বন্ধ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে তিন দিন ক্লাস হওয়ার পর আবারও আন্দোলন শুরু হয়। এক পর্যায়ে ২৮ এপ্রিল দুপুরে উপাচার্য, তাঁর অনুসারী কিছু শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির নেতারা ধাক্কাধাক্কি, কিলঘুষি ও হামলায় জড়িয়ে পড়েন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক সমিতি উপাচার্য, ছাত্রলীগের সাবেক নেতাসহ ২০ জনের নামে থানায় অভিযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও শিক্ষক সমিতির ছয়জনের নামে পালটা অভিযোগ করেন।
এমন পরিস্থিতিতে ৩০ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে শিক্ষকদের দাবি দাওয়া ও ২৮ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে দুটি তদন্ত কমিটি হয়। এরপর থেকে আর বিশ্ববিদ্যালয় খোলেনি।
পুরোনো খবর
উপাচার্য-শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর 'হামলা', উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উপাচার্যের বিরুদ্ধে পাল্টা-পাল্
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রক্টরের ...
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: উপাচার্য-শিক্ষক দ্বন্দ্বের 'বলি' শিক্ষার্থীরা