পুলিশ জানায়, রোববার রাতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ছাদেক হোসেন মজুমদার থানায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ করেন।
Published : 30 Apr 2024, 03:03 PM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনায়উপাচার্য পক্ষ এবং শিক্ষকরা থানায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ করেছেন।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ওসি আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, রোববার মধ্যরাতে থানায় অভিযোগ করেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের। এতে ভিসি, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরসহ ২০ জনের নাম অভিযোগে আছে।
তিনি বলেন, এদিকে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে শিক্ষক সমিতির সভাপতিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ছাদেক হোসেন মজুমদার।
এসব বিষয়েঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতির করা অভিযোগে বিবাদী হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন, কোষাধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান ও প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- আমিনুর রহমান বিশ্বাস, রেজা-ই-এলাহী, মাসুদ আলম, ইকবাল হোসাইন খান, পার্থ সরকার, বিপ্লব চন্দ্র দাস, ইমরান হোসাইন, মুশফিকুর রহমান খান তানিম, রকিবুল হাসান রকি, মেহেদী হৃদয়, ফয়সাল হাসান, এম নুর উদ্দিন হোসাইন, অনুপম দাস বাঁধন, আরিফুল হাসান খান বাপ্পী, ইমাম হোসাইন মাসুম, রাকিব ও দ্বীপ চৌধুরী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, “২৮ এপ্রিল বেলা ১টায় প্রশাসনিক ভবনের ফটকের সামনে শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচি চলছিল। এ সময় উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হানের পেটে ঘুসি মারেন এবং পেছন দিক থেকে কনুই দিয়ে আঘাত করেন। এরপর তার (উপাচার্যের) সঙ্গে থাকা সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি মুর্শেদ রায়হানের পেটে ঘুসি মেরে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন।
“একই সময়ে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকাদ্দেস উল ইসলামের মুখে সজোরে ঘুসি মারেন। এরপর মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে শারীরিক আঘাত করেন। এ সময় অন্তত ২০ জন শিক্ষক হামলার শিকার হন। উপাচার্যের কার্যালয়ে বসে কোষাধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান বহিরাগতদের (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে হামলা ও তালা দেওয়ার নির্দেশ দেন।”
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, “গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের ওপর উপাচার্যের দপ্তরে হামলা হয়। আমরা থানায় জিডি করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দুই মাস পর জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে তদন্ত কমিটি করে। সেটির কোনো কার্যকারিতা নেই।
“রোববার আবার বহিরাগত এনে শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা হয়। উপাচার্য নিজে হামলায় অংশ নেন, ফুটেজ আছে। প্রক্টর এক শিক্ষককে ঘুসি মারেন। কোষাধ্যক্ষ শিক্ষক সমিতির কার্যালয় ভাঙতে বহিরাগতদের পাঠান। ২০ জন শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা হয়। তাই আমরা মামলা করেছি। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।”
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা অভিযোগে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোর্শেদ রায়হান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. শামিমুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস এবং মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহফুজুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সেই লিখিত অভিযোগে বলা হয়, “অভিযুক্তরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে আদিষ্ট আছেন। শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন দাবির বিষয় নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে বিবাদীদের মতবিরোধ চলে আসতেছিল। বিবাদীরা ভিসিসহ অভিযোগের সাক্ষীদের উপর চড়াও হয়ে গত ২৮ এপ্রিল দুপুর ১টার সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকের সামনে বেআইনি জনতাবদ্ধে দাঙ্গা হাঙ্গামার উদ্দেশ্যে সমবেত হন।
“ওই সময় ভিসি মহোদয়সহ সাক্ষীগণ তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল কক্ষে প্রবেশের প্রাক্কালে তাহাদের গতিরোধ করে এবং টানা চেড়া করে নাজেহাল ও সম্মানহানি করে। ওই সময় বিবাদীরা বর্ণিত সাক্ষীদেরকে এলোপাথাড়ি কিলঘুষি মেরে সাধারণ জখম করে ভিসি মহোদয়সহ সাক্ষীদের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান করে তাদের সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ লোকজন এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ভিসি মহোদয়সহ বর্ণিত সাক্ষীদেরকে উদ্ধার করেন।”
সেখানে আরও বলা হয়, “বিবাদীরা প্রকাশ্যে ভিসি মহোদয় সহ বর্ণিত সাক্ষীদের জানমালের অনিষ্ট সাধনের হুমকি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি এবং নিদের্শনায় আমি বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করছি।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, “উপাচার্যের নির্দেশে আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। যেভাবে আমার ফাইল তৈরি করা হয়েছে সে অনুযায়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। বাকিটা থানা সংশ্লিষ্টরা বুঝবে।”
আরও পড়ুন:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর ‘হামলা’, উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে হট্টগোল: ৭ শিক্ষকের নামে থানায় জিডি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে প্রায় সবাই বিনাভোটে জয়ী
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: উপাচার্য দপ্তরে দুপক্ষে হট্টগোল, থানায় শিক্ষকরা