“এতদিন সাত দফা দাবি ছিল। এখন আমাদের মূল দাবি একটাই; এই উপাচার্যকে আমরা আর চাই না।”
Published : 28 Apr 2024, 10:54 PM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রক্টরকে অবাঞ্চিত ঘোষণার পর এবার উপাচার্যের নেতৃত্ব সাবেক শিক্ষার্থী, বিভিন্ন মামলার আসামি ও বহিরাগতদের নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
রোববার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে যান।এ সময় শিক্ষক সমিতির শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা করে।
প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় সাংবাদিকদের সামনে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, “আমরা পূর্ব ঘোষিত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছিলাম।তখন উপাচার্য এসে আমাকে ধাক্কা দেন।
“পাশাপাশি বহিরাগত ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের নিয়ে আমার সহকর্মী সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষকদের ঘুষি মেরে, সন্ত্রাসী কায়দায় ভেতরে প্রবেশ করেন।”
তিনি বলেন, “উপাচার্যের সঙ্গে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা, অছাত্র, ফৌজদারি মামলার আসামিও ছিল; তারাও শিক্ষকদের ওপর হামলা করে। এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এখন সাত দফার পাশাপাশি এখন আমাদের প্রধান দাবি উপাচার্যের অপসারণ।”
যদিও উপাচার্যের দাবি, কার্যালয়ের প্রবেশের সময় তাকে লাঞ্ছিত করেছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।তাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে বলেও তার অভিযোগ।
গত কয়েকদিন ধরেই সাত দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।চলমান আন্দোলনের মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল উপাচার্য, ট্রেজারার এবং প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।এ সময় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের কার্যালয়ে তালা দেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। রোববার সেই তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন উপাচার্য।
শিক্ষকদের সাত দফা দাবিগুলো হল- উপাচার্যের উপস্থিতিতে শিক্ষকদের ওপর হামলার বিচার, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের অপসারণ, ঢাকার গেস্টহাউস অবমুক্তকরণ, অধ্যাপকদের পদোন্নতি, আইন মোতাবেক বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে আইন বহির্ভূত অবৈধ শর্ত আরোপ নিষ্পত্তিকরণ, ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় বিতর্কিত শিক্ষাছুটি নীতিমালা রহিত করা এবং ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববারও শিক্ষকদের আন্দোলন চলছিল।এদিন বেলা ১টায় প্রক্টরিয়াল বডির নেতৃত্বে শিক্ষক সমিতির লাগানো তালা ভাঙতে যান উপাচার্যপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।এক পর্যায়ে উপাচার্য প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে গেলে নিচতলায় শিক্ষক লাউঞ্জে অবস্থান করা শিক্ষক সমিতির নেতারা তাকে বাধা দেন।
এ সময় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন নেতাকর্মী উপাচার্যকে প্রবেশ করতে সাহায্য করতে গেলে হাতাহাতিতে জড়ান শিক্ষক সমিতির নেতাকর্মীদের সঙ্গে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, “আমরা এতদিন তিনজনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে আসছিলাম। আজকে তো আমাদের গায়ে হাত দিয়েই উপাচার্য প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করেছেন।
“এতদিন সাত দফা দাবি ছিল। এখন আমাদের মূল দাবি একটাই; এই উপাচার্যকে আমরা আর চাই না।”
উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, “রোববার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হান এবং মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আমাকে ধাক্কা দেন।
“ধাক্কা সামলিয়ে আমাকে কার্যালয়ে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন কিছু শিক্ষক ও ছাত্র।ওই ছাত্ররা নিচে নেমে গেলে শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা করে।চারজনকে তারা পিটিয়ে জখম করেন এবং প্রক্টরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন।”
শিক্ষক সমিতি বেআইনী ভাবে তাকে কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমাকে আঘাত করেছে।আমি চাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান।কিন্তু তারা যা করছেন, তা মোটেও ঠিক নয়।”
উপাচার্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান।তিনি বলেন, “এ দাবি সঠিক নয়। উপাচার্য লোকজন দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করিয়েছেন। এতে আমাদের সমিতির সাতজন আহত হয়েছেন।”
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল বলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া জানান।