এই জিডির তিনদিন আগে শিক্ষকদের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি।
Published : 22 Feb 2024, 11:10 PM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য কার্যালয়ে দুপক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা, হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় এবার সাত শিক্ষকের নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে একপক্ষ।
বুধবার রাতে করা জিডিতে সাত শিক্ষক ছাড়াও ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাত শিক্ষকের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার বিকালে জানিয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
এর আগে ঘটনায় রাত সোমবার শিক্ষকদের নিরাপত্তা চেয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি আবু তাহের। তাতে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসেনসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির জিডিতে বলেছেন, “দাপ্তরিক কাজে ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের কক্ষে গেলে ভেতরে আগে থেকে অবস্থান করা শিক্ষকরা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কেন সেখানে গেছেন তা জানতে চান। এক পর্যায়ে তাদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও মারমুখী ভঙ্গিতে জোর করে উপাচার্যের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
“তখন আমি বলি, ‘স্যার আমরা দাপ্তরিক কাজে উপাচার্য স্যারের কাছে এসেছি। আপনারা আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ কেন করছেন, আমরা কি মানুষ নই?
“এক পর্যায়ে ভেতরে থাকা শিক্ষকরা আমাদের দিকে তেড়ে এসে টেনে-হেঁচড়ে উপাচার্যের কক্ষ থেকে আমাকে এবং আমার সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেনকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন।”
পরে উপাচার্যের সঙ্গে কর্মকর্তারা কথা বলতে চাইলে শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে আরও বেশি খারাপ আচরণ করেন বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তারা তাদের চাকরি ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ায় এ জিডি করা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন।
জিডিতে বিবাদী হিসেবে উল্লেখ করা সাত শিক্ষক হলেন- বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ রাজু, ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক মো. কামরুল হাসান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এবং ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক আলীমুল রাজী।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার দিকে শিক্ষকদের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক আবু তাহের।
জিডিতে নয়জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ৩০ জনের কথা বলা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন রয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতির জিডিতে বলা হয়েছে, “সোমবার নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্যরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন ও সাবেক শিক্ষার্থী (ছাত্রলীগ নেতা) ইমরান হোসাইনের নির্দেশে জোর করে উপাচার্যের দপ্তরে প্রবেশ করেন কর্মকর্তারা। এরপর তারা মারমুখী আচরণ করেন।
“তখন ডেপুটি রেজিস্ট্রার শিক্ষকদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব’। তখন শিক্ষকরা প্রক্টরিয়াল বডির সাহায্য চান। কিন্তু প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি। উল্টো তারা সাত থেকে আটবার মারমুখী আচরণ করেন। এতে শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।”
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে প্রায় সবাই বিনাভোটে জয়ী
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: উপাচার্য দপ্তরে দুপক্ষে হট্টগোল, থানায় শিক্ষকরা