বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটি ব্কিাল সাড়ে ৪টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করতে আসেন।
Published : 19 Feb 2024, 11:05 PM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপক্ষের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা ও হট্টগোলের পর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং প্রক্টরের অপসারণ দাবি করে শিক্ষকদের একটি অংশ উপাচার্য দপ্তরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে তারা সেখান থেকে থানায় যান সাধারণ ডায়েরি করার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরে সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন দপ্তর ছেড়ে বাংলোয় চলে গেলেও শিক্ষকরা সেখানেই ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো ধরনের সমাধান ও আশ্বাস না পেয়ে নিজেদের নিরাপত্তায় রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় অভিযোগ দিতে এসেছেন বলে জানান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি আবু তাহের।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা ব্কিাল সাড়ে ৪টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন।
তখন সেখানে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রক্টর অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। প্রক্টর বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন; অপরদিকে নবনির্বাচিত কমিটির নেতারা অন্য অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন। তাদের মধ্যে পুরনো বিরোধ রয়েছে।
এ সময় উপাচার্যের দপ্তরে হট্টগোলের আওয়াজ শুনে সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। তাৎক্ষণিকভাবে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু হট্টগোল আরও বাড়তে থাকে বলে উপস্থিত কয়েকজন জানান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, “আমরা উপাচার্য দপ্তর থেকে চিল্লাচিল্লি শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসি। এরপর দেখি শিক্ষকরা উপাচার্যের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি করছেন। তখন অনেক ছাত্রও জমা হয়। এরপর প্রক্টরিয়াল বডি আমাদের সরিয়ে দেয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অনুপম দাস বাঁধন বলেন, “আমরা কাছাকাছি ছিলাম। ওখানে উচ্চবাচ্য হচ্ছিলো শুনে আসছি। এসে দেখি ভেতরে উপাচার্য স্যারের সঙ্গে তর্ক হচ্ছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন বলেন, “আমরা যখন আসি, তখন শুনতে পাই উপাচার্য স্যারের রুমে কয়েকজন শিক্ষক অসদাচরণ করছিলেন ও উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন। আমরা শাখা ছাত্রলীগ সেখানে গেলে কয়েকজন শিক্ষক আমাদের দিকেও তেড়ে আসেন।
“আমরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা চাই না। উপাচার্য স্যারের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো চলছে। আমাদের দাবি হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে সেগুলো নিয়ে উপাচার্য স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করুক, বিশৃঙ্খলা না করে নিজেদের মাঝে সমন্বয় করে সমাধান করুক।”
শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত কয়েকজন নেতা বলেন, নবগঠিত কমিটি মিষ্টি নিয়ে উপাচার্য স্যারের কাছে যায়। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে তারা ইশতেহারের দাবিগুলোর কথা জানান। কিন্তু উপাচার্য পাত্তাই দিচ্ছিলেন না। তার মধ্যেই কিছু অছাত্র এসে হামলা করেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, “আমরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি। উপাচার্য স্যার আমাদের রেখে উনার বাংলোতে চলে গেছেন। আমাদের আজকের দাবি হলো, শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রক্টরের অপসারণ করতে হবে। পরবর্তীতে আমরা কী করবো সেটা শিক্ষক সমিতির সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেব।”
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, “শিক্ষকদের সঙ্গে এই ধরনের ব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রক্টরকে অপসারণ না করা হবে, ততক্ষণ কর্মসূচি চলবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, “যা ঘটেছে তা সবার সামনেই ঘটেছে। অগোচরে কিছু ঘটেনি। আমি নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, “আমাকে চার-পাঁচ বার বসিয়েছে। আমাকে টেররিস্ট, মিথ্যাবাদী বলেছে। আমি নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী পালন করি। আমি বলছি তোমরা শিক্ষকসুলভ আচরণ করো। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয় সবার।
“একজন আমাকে আক্রমণ করেছে। আমি তাকে সামাল দিতে ব্যস্ত ছিলাম। এখানে আমি কোনো অত্যাচারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে চাই না। আমি অসুস্থতা নিয়ে তো এত চাপ নিতে পারব না।”