সবাইকে নিয়ে বুধবার সকালে ডিসি অফিসে ব্ঠৈক হবে, বলেন ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা দিদারুল ইসলাম রুবেল।
Published : 04 Mar 2025, 11:05 PM
কক্সবাজারে বিমান ঘাঁটির কাছে বিমানবাহিনীর সদস্য ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ ও যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।
এর একটি করেছেন নিহত শিহাব কবির নাহিদের বাবা মো. নাসির উদ্দীন। অপরটি করা হয়েছে বিমানবাহিনীর তরফে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার তিন দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। আর সোমবার বিকালে সংঘর্ষে নিহত শিহাবের বাবা আরেকটি মামলা করেন।
দুটি মামলারই তদন্ত শুরুর তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
আগে মামলা হলেও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে মঙ্গলবার দুপুরে ডিসি কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিমান ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতিপাড়া এলাকা পরিদর্শনে গেলে। তখন স্থানীয়রা বিষয়টি জানতে পারেন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিমান ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতিপাড়া এলাকায় ২৪ ফেব্রুয়ারি স্থানীয়রা বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সে সময় ঢিল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে গুলিও ছোড়া হয়। সংঘর্ষের সময় ব্যবসায়ী শিহাব কবির নাহিদ (৩০) নিহত হন।
ওসি বলেন, বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট মো. জিয়াউল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। এতে স্থানীয় দুই ব্যক্তি রাহাত ইকবাল ওরফে ইকবাল বাহার ও এজাবত উল্লাহকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া পরিচয় ছাড়া আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০ জনকে।
অপরদিকে নাহিদের বাবা মো. নাসির উদ্দীনের করা মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম বা পরিচয় দেওয়া হয়নি।
মামলা করতে দেরির কারণ হিসেবে তিনি এজাহারে লেখেন, সন্তান কবর দেওয়ার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে শয্যাশায়ী ছিলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, “এজাহারটা আমার ছেলের জন্য আমার শোকবার্তা, আমার কান্না। কক্সবাজারে এখন এমপি নেই কিন্তু সাবেক এমপি তো আছে। এতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, সিভিল সোসাইটি আছে, নাগরিক সামাজিক সংগঠন আছে, কেউ কি শোকবার্তা দিছে? কেউ কি প্রতিবাদ করল? তারা কিছু করল না। আর আমি তো ব্যক্তি মানুষ! আর আমার ছেলেকে কারা মারছে বুঝতে হবে!”
এখনও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাননি বলেও তুলে ধরেন নাসির উদ্দীন।
এর আগে তিনি হাসপাতাল থেকে দেওয়া ছেলের মৃত্যু সনদ ও পুলিশের করা সুরতাহাল প্রতিবেদনের উপর আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন।
সমিতিপাড়ায় ডিসি
এদিকে দুপুরে সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়া পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের ডিসি সালাউদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেন।
স্থানীয় ভূমি রক্ষা আন্দোলনের দিদারুল ইসলাম রুবেল বলেন, “মামলা ২৭ তারিখ হলেও আমরা আজকে দুপুরে জানতে পেরেছি। এলাকায় আজ ডিসি স্যার এসেছিলেন। তাকেও আমরা বলেছি। রাতে আমাদের মিটিং আছে সেখান থেকে পরবর্তীকে করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
স্থানীয়দের আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি সালাউদ্দিন বলেন, “আমি আজ সেখানে গিয়েছিলাম। এসময় সেখানে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারাও ছিলেন। তেমন কিছু দেখিনি। মামলার বিষয়টি সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া। তারা যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে সেটা বলতে পারে, কিন্তু তেমন কিছু বলেননি।”
দুইপক্ষকে নিয়ে বসার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, “বসার চেয়ে মাঠে বেশি যাওয়া জরুরি। সেখানে একটা কমিটি হয়েছে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা মিলে। বিমান বাহিনী ও অ্যাভিয়েশনের জায়গায় যারা আছেন তারা নিজেরা চিহ্নিত করে নিজেরাই সরে যাবেন বলেছেন। এ ব্যাপারে তাদের যা প্রয়োজন তাই করা হবে।”
তবে এ ব্যাপারে ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা দিদারুল ইসলাম রুবেল বলেন, “সকলকে নিয়ে কাল সকালে ডিসি অফিসে মিটিং হবে।”
“আমরা স্পষ্ট বলেছি, বিমানবাহিনীর অধিগ্রহণ করা জায়গায় যারা আছেন, তাদের যথাযথ স্থায়ী পুনর্বাসন করেই সরাতে হবে।”
যা আছে দুই এজাহারে
বিমানবাহিনীর করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে নাশকতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিনষ্টের উদ্দেশ্যে বিমানবাহিনীর ঘাঁটির স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোর ওপর দেশি অস্ত্র, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ অতর্কিতে হামলা করে।
দুষ্কৃতকারীরা বিমানবাহিনীর ছয়-সাতটি সিসিটিভি ক্যামেরা, দুটি মোটরসাইকেল, কয়েকটি সরকারি গাড়ি, একটি অফিস ভবন, নির্মাণাধীন দালান ভাঙচুর করে। নির্মাণসামগ্রীও লুটপাট করা হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
অপরদিকে নিহত নাহিদের বাবা নাছির উদ্দীনের মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে তিনি চোখের চিকিৎসা করাতে স্ত্রীকে (আমেনা খাতুন) নিয়ে বাড়ি থেকে শহরের কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে যান। দুপুর ১২টার দিকে সেখানে মহিউদ্দিন নামের এক যুবকের মাধ্যমে জানতে পারেন, একমাত্র ছেলে শিহাব কবিরকে বিমানবাহিনীর জনৈক সদস্য গুলি করে হত্যা করেছে এবং সন্তানের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পড়ে আছে।
খবর শোনার পর তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানান, ময়নাতদন্ত করার পর লাশ হস্তান্তর করা হবে। সন্ধ্যা ৬টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাশ হস্তান্তর করে। শিহাব কোনো রাজনীতি কিংবা বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না। বিমানবাহিনীর সদস্য কিংবা অন্য কারও সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব–সংঘাতও ছিল না।
এজাহারে বলা হয়, শিহাব কবির রাস্তায় কী ঘটছে দেখার জন্য সমিতিপাড়ার জনৈক নাঈমের বাসার কাছে যান। তখন মাথায় গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়। এ সময় বিমানবাহিনীর সদস্যরা শিহাবকে নিয়ে যান। তারা তাৎক্ষণিকভাবে শিহাবকে হাসপাতালে না নিয়ে দেরি করেন, এর ফলে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে এজাহারে দাবি করেন তার বাবা।
এ ঘটনার পর সেদিন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বলেছিল, কক্সবাজার বিমান ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষের মধ্যে যে তরুণের মৃত্যু হয়েছে, তিনি বিমান বাহিনীর গুলিতে মারা যাননি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর বলেছিল, “একটি কুচক্রী মহল বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গুলিতে উক্ত যুবক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়।”
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিমান ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতি পাড়া এলাকায় স্থানীয়রা বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সে সময় ঢিল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে গুলিও ছোড়া হয়।
আরও পড়ুন
কক্সবাজারের শিহাব বিমান বাহিনীর গুলিতে মারা যাননি: আইএসপিআর
কক্সবাজারে বিমান ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষ, নিহত ১
কক্সবাজারে বিমান ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষ: লোক সমাগম কম সমিতিপাড়া বাজারে
কক্সবাজার বিমান ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষ: 'এলাকাবাসীকে সন্ত্রাসী বানানো
বিমান ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষ: মৃত্যু সনদ নিয়ে 'আপত্তি' নাহিদের বাবার