এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
Published : 24 Feb 2025, 11:47 PM
কক্সবাজারে বিমান বাহিনী ঘাঁটির কাছে এলাকাবাসীর সঙ্গে বাহিনীটির সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনায় আইএসপিআরের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় ‘এলাকাবাসী’ ব্যানারে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সংগঠক এস এস সাগর এ অবস্থান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমরা খবর পেয়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি, অবস্থা বেগতিক; সাংঘর্ষিক। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ভেতরে যাই; আমরা একজন নিহতের কথা জানতে পারি।”
আইএসপিআরের বিবৃতিতে বর্ণনা করা ‘দুর্বৃত্তদের হামলারও’ প্রতিবাদ করেন তিনি। বলেন, “আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কারণ তাদের এই অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্যের কারণে একটি কমিউনিটিকে সন্ত্রাসী রূপ দেওয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসী হিসেবে রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এলাকাবাসী ও সাংবাদিকরা জানেন বিষয়গুলো কেমন হয়েছে। আইএসপিআরের বক্তব্য এক নম্বর ওয়ার্ডবাসীর সঙ্গে আমিও প্রত্যাখ্যান করছি।”
ভবিষ্যতেও ‘ন্যায়ভিত্তিক’ আন্দোলনে কক্সবাজারবাসীর সঙ্গে থাকার কথা তুলে ধরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা সাগর এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও দাবি করেন।
এদিন দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিমান ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতি পাড়া এলাকায় স্থানীয়রা বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সে সময় ঢিল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে গুলিও ছোড়া হয়। সংঘর্ষের সময় শিহাব কবির নাহিদ নামে একজন ব্যবসায়ী নিহত হন।
আইএসপিআর তখন এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় বলে, “বিমান বাহিনীর ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতি পাড়ার কিছু দুর্বৃত্ত বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।”
ওই বার্তায় হতাহতের কথা না বললেও পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে।
নিহত শিহাব কবির নাহিদ (৩০) পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি সমিতিপাড়ার নাছির উদ্দিনের ছেলে। শিহাবের তিন বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
তার লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখার কথা তথ্য দিয়েছেন হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম।
শিহাবের মা কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমেনা খাতুন হাসপাতালে আহাজারি করছিলেন। সেখানে তিনি বলছিলেন, “বিমান বাহিনী আমার ছেলের মাথায় গুলি করেছে।”
শিহাব গুলিতে নিহত কি না জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুবাক্তাগিন মাহমুদ শাহিল বলেন, “মাথায় আঘাত রয়েছে। গুলিতে কি না তা জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর।”
কক্সবাজারের ডিসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সুপারের বরাত দিয়ে বলেন, “এ ঘটনায় একজন নিহত এবং আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।”
সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে মামলা করার কথা বলেছেন স্থানীয়দের পক্ষে এজাজুল্লাহ কুতুবী।
নিহত শিহাবের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে কি না জানতে চাইলে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন তার মা আমেনা খাতুন।
এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় বিমান বাহিনী বা এলাকাবাসী কারো পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান।
সংবাদ সম্মেলনে হামলার বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি মওলানা ফোরকানুল রশিদ বলেন, “আল্লাহর কসম করে বলছি, আমার এলাকার মানুষ এমন না। তারা আইনশৃঙ্খলা মেনে চলে শান্তি পছন্দ করে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জাহেদুল ইসলাম নামে শিক্ষানবিশ এক আইনজীবীকে ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে ছাড়াতে লোকজন সেখানে যায়। তারপরই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন নামের এক যুবক বলেন, “জাহেদ ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পরলে আমরা তাকে উদ্ধার করতে যাই। আমরা বলেছি, আমাদের ভাইকে ফেরত দেন। আমরা কোনো হামলা করিনি।”
জাহেদকে দুপুর ১টার পর স্থানীয় ‘রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের অনুরোধে’ ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তার চাচা আক্তার আহমেদ।
তবে জাহেদের বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুবক্তাগিন মাহমুদ শহেল কিছু জানাতে পারেননি।
স্থানীয়রা বলছিলেন, এক নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়া এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ‘উচ্ছেদ আতঙ্কে’ ভুগছিলেন। এলাকার মানুষের আন্দোলনে জাহেদুল ইসলামও ছিলেন।
জাহেদ কিছুদিন ধরে ‘থ্রেটের’ কথা বলছিলেন বলেও দাবি করেন তার সহকর্মী খোরশেদ আলম ও সেজান এহসান।
‘উচ্ছেদবিরোধী’ আন্দোলনের সংগঠক দিদারুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলমান। তবু বিমান বাহিনী কেন এমন ঘটনা ঘটাল এর তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার চাই। একটি তাজাপ্রাণ ঝরে যাওয়া দুঃখজনক। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় আমাদের ভিটেমাটি রক্ষা করতে চেয়েছি, বেআইনি কিছু চাইনি।”
ঘটনার বিবরণে যা বলছে আইএসপিআর
সমিতিপাড়ায় কী ঘটেছে, সে বিষয়ে বিমানবাহিনীর ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
কক্সবাজারে অবস্থিত বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার সংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্ত সোমবার (২৪-২-২০২৫) তারিখে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট হতে একজন স্থানীয় লোকের মটর সাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমান বাহিনীর প্রভোস্ট কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিকেরও বেশি স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাধা দেয়।
পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপর ইট পাটকেল ছোড়ে। এসময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন, যার মধ্যে বিমান বাহিনীর ৪ জন সদস্য (১ জন অফিসার ও ৩ জন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমান বাহিনীর Rules of Engagement অনুয়ায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়, তবে স্থানীয় জনসাধারণের উপর কোন প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমান বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমান বাহিনীর গাড়ির কাচ ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি।
আরও পড়ুন