এবারের আইপিএলের সাত ম্যাচের প্রতিটিতেই ভালো শুরু করেছেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান, তবে একটি ফিফটিও করতে পারেননি এখনও পর্যন্ত।
Published : 18 Apr 2025, 09:12 AM
২২ বলে ১৬ রান। টিভি পর্দায় দেখে অনেকে চোখ কচলাতে পারেন। হাইনরিখ ক্লসেনই তো এটা! তিনি নিজেও হয়তো অনুভব করতে পারলেন। ঘুম থেকে জেগে উঠে টানা চার বলে মারলেন দুটি ছক্কা ও দুটি চার। চলতি আইপিএলে নিজের সর্বোচ্চ স্কোরেও পৌঁছে গেলেন। কিন্তু ওই ঝলক দেখিয়েই শেষ। পরের ওভারেই তিনি বোল্ড জাসপ্রিত বুমরাহর বলে।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে যেমন হলো, এবারের আইপিএলে তার নিয়মিত চিত্র এটি। প্রতি ম্যাচেই ক্লসেন দারুণ শুরু করছেন। প্রতিবারই মনে হচ্ছে, এই বুঝি তার দিন এলো। কিন্তু জ্বলে ওঠার মুখেই নিভে যাচ্ছে আগুন। বড় হচ্ছে না একটি ইনিংসও।
প্রশ্নও তাই উঠে যাচ্ছে, আকাশছোঁয়া দামে ধরে রাখা ক্রিকেটারের কাছ থেকে প্রত্যাশার কতটা পাচ্ছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
এমনিতে ক্লসেনের পরিসংখ্যান এই আসরে খারাপ নয় মোটেও। সাত ম্যাচে গড় ৩৫, স্ট্রাইক রেট ১৫৯.০৯। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গড় ও স্ট্রাইক-রেটের এই যুগলবন্দিকে বেশ ভালোই বলতে হবে। সমস্যা হলো, বড় ইনিংস নেই একটিও। প্রভাববিস্তারি বা ম্যাচ জেতানো ইনিংসও আসেনি তার ব্যাট থেকে।
সাত ইনিংসের প্রতিটিতেই তিনি ২০ রান পেরিয়েছেন। অবিশ্বাস্যভাবে একটিকেও নিতে পারেননি ৪০ পর্যন্ত। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে বৃহস্পতিবার ২৮ বলে ৩৭ রানের ইনিংসটিই চলতি আসরে তার সর্বোচ্চ।
রানপ্লাবনের ম্যাচে ১৪ বলে ৩৪ রানের ইনিংস দিয়ে তিনি আসর শুরু করেছিলেন। সেদিনের জন্য তা বেশ কার্যকর ইনিংস ছিল। পরের ম্যাচে রান আউট হয়ে যান ১৭ বলে ২৬ রান করে। ইনিংসের তখনও আট ওভার বাকি।
পরে দিল্লির বিপক্ষে যখন ১৯ বলে ৩২ রান করে ফেরেন, দলের ইনিংসের তখন স্রেফ একাদশ ওভার। এরপর কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের ম্যাচে ২১ বলে ৩৩ করে আউট হন পঞ্চদশ ওভারে, গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ১৯ বলে ২৭ করে আউট হন ছয় ওভারের বেশি বাকি থাকতে।
পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ২৪৬ রান তাড়া করার পথে অবশ্য নিজের কাজটা তিনি মোটামুটি ঠিকঠাকই করেন। আভিশেক শার্মাকে সঙ্গ দিয়ে জুটি গড়েন এবং শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১৪ বলে ২১ রান করে। এরপর মুম্বাইয়ের বিপক্ষে এই ৩৭ রানের ইনিংস।
একটি ম্যাচে অপরাজিত থাকায় সামগ্রিক ব্যাটিং গড় ভালো, স্ট্রাইক রেটও খারাপ নয়। কিন্তু আসরের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটারের একজনের কাছ থেকে তো প্রত্যাশা আরও বেশি কিছুর! তিনি বড় ইনিংস খেলবেন বা ব্যবধান গড়ে দেবেন। ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ইনিংস খেলবেন। সেসব এখনও দেখা যায়নি এবার।
গত দুই আসরে তা দেখা গেছে ঠিকই। ২০২৩ আসরে হায়দরাবাদের হয়েই প্রায় ৫০ গড় ও ১৭৭ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৪৪৮ রান। পরের আসরে প্রায় ৪০ গড় ও ১৭১ স্ট্রাইক রেটে করেন ৪৭৯ রান। দলের ফাইনালে ওঠায় রাখেন বড় অবদান।
আইপিএলের পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়েও বিধ্বংসী সব ইনিংস খেলে এই সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ক্লসেন। বিশেষ করে, স্পিনে বড় শট খেলার অবিশ্বাস্য দক্ষতার পরিচয় মেলে ধরেন।
নিলামে গেলে আইপিএল দলগুলি নিশ্চিতভাবেই হুমড়ি খেয়ে পড়ত তাকে দলে পেতে। এজন্যই এবার মেগা নিলামের আগে তাকে ২৩ কোটি রুপিতে ধরে রাখে হায়দরাবাদ। যেখানে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের জন্য তাদের খরচ ছিল ১৮ কোটি রুপি, গত আসরের সফল দুই ওপেনার ট্রাভিস হেড ও আভিষেক শার্মাকে তারা ধরে রাখে ১৪ কোটি রুপিতে।
এটিই বলে দেয়, ক্লসেন কতটা মূল্যায়ন পেয়েছে হায়দরাবাদের কাছে।
তবে পারিশ্রমিকে সবার ওপরে হলেও ৩৩ বছর বয়সী বাটসম্যান নিজের সেরা রূপ মেলে ধরতে পারেননি এখনও। গত আসরে ফাইনালে খেলা দলও ধুঁকছে এবার। সাত ম্যাচের স্রেফ দুটি জিতে তাদের অবস্থান পয়েন্ট তালিকায় এখন তলানি থেকে দুইয়ে।
হায়দরাবাদের ভাগ্য বদলাতে যে ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক করতে হবে, সেই তালিকায় ওপরের দিকে থাকবে এটি-ক্লসেনের ‘ক্লাস’ মেলে ধরা।