খরচের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চান পাটচাষিরা।
Published : 18 Apr 2025, 09:22 AM
পাট চাষাবাদে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ফরিদপুরের চাষিরা।
চাষিদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় আছেন তারা।
সোনালী আঁশখ্যাত পাট চাষের সঙ্গে জড়িত কৃষকরা বলছেন, প্রতি বছরের মত এবারও পাটের আবাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।
তাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাজারে কাঙ্ক্ষিত হারে পাটের দাম তারা পান না। এতে বছর বছর তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
এবার উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে সেই আশঙ্কাই করছেন চাষিরা।
নানা কারণে ফরিদপুরে পাট উৎপাদনের ব্যয় বাড়ার কথা স্বীকার করলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহাদুজ্জামান।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত বছর খুচরা পর্যায়ে প্রতিমণ পাটের বিক্রয় মূল্য ছিল প্রকার ভেদে আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা।
চাষিদের দাবি, গত বছর বাজারে পাটের এই দাম আর তাদের উৎপাদন খরচ ছিল সমান সমান।
অর্থ, সময় ও শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত পণ্যে লাভের মুখ দেখতে না পেরে তারা বিপর্যস্ত।
পাট উৎপাদনে দেশের অন্যতম শীর্ষ জেলা হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরে এ মৌসুমে ৮৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এ অঞ্চলের চাষিদের দাবি, বৈরী আবহাওয়ার কারণে পানির দুষ্প্রাপ্যতা, পাট চাষাবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় সব ধরনের উপকরণ ও শ্রমিকের দাম বাড়ায় এবার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ।
পাট উৎপাদন খরচের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে ও বাজারে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চান জেলার পাটচাষিরা।
ফরিদপুরের সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালামারী, ভাঙ্গা উপজেলার মাঠ থেকে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজসহ অন্য ফসল তুলে নেওয়ার পরই কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পাটের জমি প্রস্তুত ও বীজ বপনে।
ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চাষিদের কেউ সেচ দিয়ে পাটের ক্ষেত ভেজাচ্ছেন, কেউ বীজ বপন করছেন, কেউ বা ক্ষেত থেকে আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন। তবে তাদের চোখে-মুখে স্পষ্ট ছিল হতাশার ছাপ।
জেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের পাট চাষি আশুতোষ মালো, ফারুক জোসেন, মনিরুজ্জামানসহ অনেকেই দাবি করেন, উৎপাদন খরচ বাড়লেও আনুপাতিক হারে বাড়ে না পণ্যের মূল্য। আর এতে বরাবরই আর্থিক ক্ষতিতে থাকেন কৃষকরা।
তারা বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ ভূর্গভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। দিন দিন এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে।
চাষিরা জানান, এতে তাদের জমিতে সেচের খরচ বেড়েছে প্রায় তিনগুন।
এ ছাড়া বীজ, সার-ওষুধসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ার পাশাপাশি দৈনন্দিন শ্রমিকের বাড়তি মজুরি ভাবিয়ে তুলেছে কৃষকদের।
বোয়লামারীর দাদুড়ে বিলের পাট চাষিরা জানালেন, ব্যয়ের সঙ্গে আয় মেলাতে না পেরে হাঁপিয়ে উঠছেন তারা।
তারা মনে করেন, পাট আবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপকরণ ও অন্যান্য ব্যয় হ্রাস করার পাশাপাশি ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। না হলে জেলায় পাট চাষে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো কঠিন হতে পারে।
পাটের উৎপাদন ব্যয় বাড়ার কথা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহাদুজ্জামান জানালেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বৈরি আবহাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে।
তবে ভালোভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে পারলে ব্যয়ের হার কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।