বান্দরবান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজারগামী দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
Published : 08 Aug 2023, 07:29 PM
কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বান্দরবান শহর প্লাবিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। রোববার রাত থেকে বিদ্যুতের পাশাপাশি নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলার সার্বিক দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর জেলা প্রশাসক কার্যালয়, সদর উপজেলা কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিসিয়াল কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন অফিস, পাসপোর্ট অফিস ও বিআরটিএ অফিসে হাঁটু পানিতে তলিয়ে আছে।
সড়কে পানি ওঠায় রোববার সকাল থেকে বান্দরবান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ির পথে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া জেলা শহর থেকে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবান শহরের ৬০ ভাগ প্লাবিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সদর উপজেলায় ১৯২ দশমিক ৫ মিলিমিটার এবং লামায় ২২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার এবং সাঙ্গু নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৮১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার আট হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে পাহাড় ধসে প্রায় ৪৫০টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
পাহাড় ধস নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাহাড় ধসে একজন রোহিঙ্গার প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন আরও ছয়জন। আহতদের মধ্যে দুজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে তারা আশঙ্কামুক্ত।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া আলীকদম উপজেলা নয়াপাড়া ইউনিয়নের মো. মুছা (২২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার রিংও পাড়ার বাসিন্দা মেমপই ম্রো (৩০) ঢলে ভেসে নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ফায়ার সার্ভিসসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এরই মধ্যে ২-৩ ফুট পানি উঠেছে। এ ছাড়া পুলিশ সুপারের বাসভবন ও কোর্ট ভবন এলাকায় ২-৩ ফুট পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। জেলার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র প্লাবিত হওয়ায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাড়াও বাকি ছয়টি উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২০৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় এরই মধ্যে ৮৫ টন খাদ্য এবং ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা উপজেলাভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ত্রাণ বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল রেসপন্স টিম এবং প্রত্যেক উপজেলায় কুইক রেসপন্স টিম গঠনের কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সভা
দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় মঙ্গলবার দুপুরে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভা শেষে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “বান্দরবানে সপ্তম দিনের মত বৃষ্টি হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এরইমধ্যে সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। বাহিনীটি সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
“তারা আমাদের কাছে যেসব রিকোয়ারমেন্ট চেয়েছে আমরা সেগুলো দিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। সেটা যাতে না হয় আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেসব আশ্রয়কেন্দ্র মানুষ রয়েছে সেখানে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লামা উপজেলায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্লাবিত হয়েছে। খাদ্যগুদামেও পানি উঠেছে। এ ছাড়া মোবাইল এবং ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
যেসব এলাকায় ত্রাণ সামগ্রীসহ অন্যান্য সহযোগিতা এখনও পৌঁছায়নি সেখানে যত দ্রুত সম্ভব সহায়তা পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন-
বান্দরবানে পাহাড় ধস: মেয়ের লাশ উদ্ধার, মা নিখোঁজ
পানিবন্দি বান্দরবানে খোলা হয়েছে দুই শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র
থৈ থৈ পানিতে ‘বিচ্ছিন্ন’ বান্দরবান, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ
রাঙামাটিতে ছোটবড় ২৩৫ পাহাড় ধস, পানিবন্দি ৩০ হাজার মানুষ