ছয় দিন ধরে 'নিখোঁজ' ব্রাহ্মণবাড়িয়ার-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ ভোটের পরদিন ঢাকায় তার বসুন্ধরার বাসায় ফিরে এসেছেন বলে খবর দিয়েছে পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসিফের নিখোঁজের বিষয়ে আশুগঞ্জ থানায় করা জিডির তদন্ত চলছিল। তদন্তের ফাঁকে আজ বেলা ১২টার দিকে তার স্ত্রী মেহেরুন নিছার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আশুগঞ্জ থানার ওসিকে জানান, তিনি স্বামীর খোঁজ পেয়েছেন। তিনিও ঢাকায় আছেন। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পথে রওনা হয়েছেন।”
এতদিন আসিফ কোথায় ছিলেন, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য দিতে পারেননি পুলিশ সুপার। আসিফের স্ত্রী মেহেরুন নিছার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পুলিশ সুপার বলেন, তিনি আসিফের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেহেরুন নিছা তাকে বলেছেন, তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে কথা বলবেন।
গত ২৭ জানুয়ারি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ 'নিখোঁজ' আছেন বলে দাবি করে আসছিল তার পরিবারের। আসিফের সন্ধান ও সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন তার স্ত্রী মেহেরুন নিছা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর তিনি দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে তফসিল দেয় নির্বাচন কমিশন।
গত ২৯ জানুয়ারি দুপুরে আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছা সাংবাদিকদের বলেন, গত শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাত থেকে আসিফ নিখোঁজ রয়েছেন। তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে পুলিশ এসে অযথা তল্লাশি করে হয়রানি করছে। বাড়ির সামনেও কিছু পুলিশ আসা যাওয়া করছে।
যদিও সেসময় অভিযোগ অস্বীকার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “পুলিশ আসিফের বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করেনি। পুলিশ কখনোই তার বাড়িতে যায়নি এবং এখনও নেই।”
পরবর্তীতে আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছাকেও সাদা পোশাকধারী লোকজন দিয়ে ‘নজরবন্দি’ রাখার অভিযোগ ওঠে।
নিখোঁজের আগে আবু আসিফ আহমেদ জানিয়েছিলেন, ২৫ জানুয়ারি রাত থেকে তার শ্যালক ও নির্বাচন পরিচালনাকারী কমিটির প্রধান সমন্বয়ক শাফায়েত হোসেন (৩৮) 'নিখোঁজ' রয়েছেন।
একই দিন মধ্যরাতে আসিফের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মুসা মিয়াকে (৮০) একটি মারামারির মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ভোটোর আগে আসিফ নিখোঁজ হওয়া নিয়ে আলোচনার মধ্যেই তাকে উদ্ধারের জন্য মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সেদিনই নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, এই ব্যক্তি (আসিফ) নিজেই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন বলে তার ধারণা।
ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “একটা লোক যদি লুকিয়ে থাকে ইচ্ছাকৃতভাবে, তাহলে তো তাকে খুঁজে বের করা কঠিন।”
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আসিফ। তিনি আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন; উপজেলা পরিষদেরও সাবেক চেয়ারম্যান তিনি। ভোটে দাঁড়ানোয় তাকেও দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
বুধবার এ আসনে দিনভর ভোট শেষে রাতে বিএনপির পদত্যাগী নেতা আব্দুস সাত্তার ভূঁঞা বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। দুই উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকতা অরবিন্দ বিশ্বাস বাপ্পী এবং মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কলারছড়ি প্রতীকে উকিল আব্দুস সাত্তার পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৯১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাষানী লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন নয় হাজার ৬৩৫ ভোট।জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম গোলাপ ফুল প্রতীকে পেয়েছেন এক হাজার ৮১৮ ভোট।
আর ‘নিখোঁজ’ আবু আসিফ আহমেদ মোটরগাড়ি প্রতীকে পেয়েছেন তিন হাজার ২৬৯ ভোট।
আরও পড়ুন: